বিশ্বের ৮২ কোটি ৮০ লাখ মানুষ প্রতি রাতে অনাহারে ঘুমান। পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে রয়েছেন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০% মানুষ।
এই পরিসংখ্যান প্রায় এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন বেড়ে চলেছে অনাহারের মাত্রা।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এ তথ্য জানিয়েছে।
এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক ক্ষুধা নিয়ে জনগণকে সচেতন করতে ২৮ মে কে বিশ্ব ক্ষুধা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান “দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট”।
ক্ষুধার ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হয়েছে, ক্ষুধা এমন এক অবস্থা, যখন শরীর পর্যাপ্ত খাদ্য পায় না। দীর্ঘ সময়ের এই অবস্থায় স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তা হতে পারে সারাজীবনের শারীরিক সমস্যা। খাদ্য সংকটের কারণে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের শরীরে শক্তি, গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, খনিজ লবন ও প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয়। শিশুদের মধ্যে এমন স্বাস্থ্য সমস্যার হার সর্বোচ্চ। অভুক্ত থাকার কারণে অপুষ্টিজনিত নানাধরণের সমস্যারও সৃষ্টি হয়।
আগের দশকে ক্ষুধা বা খাদ্যাভাব কমে এসেছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা আবার বিশ্বজুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এজন্য যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনৈতিক আঘাত ও কোভিড-১৯ মহামারীকে দায়ী করা হয়েছে।
গত দশকে অনাহারীর মাত্রা কমতে থাকলেও কয়েক বছর ধরে বাড়ছে ক্ষুধার্তের সংখ্যা। এছাড়া উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে খাবারের দাম।
এফএও এর মতে, গত বছরের তুলনায় অনাহারীর সংখ্যা এ বছরে বেড়েছে প্রায় ৪৬ লাখ। ক্ষুধার্ত এই মানুষগুলোর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ নারী এবং প্রায় ৮০% এমন অঞ্চলের বাসিন্দা যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব বিদ্যমান।
এফএও এর অর্থনীতিবিদ মনিকা তোথোভা বলেন, “এমনকি বৈশ্বিক পর্যায়েও খাদ্যের দাম বেড়েছে। বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন নীতির কারণে দেশগুলোতে দাম বৃদ্ধির হারের তারতম্য রয়েছে।”
শুধু এশিয়াতে ২০২১ সালে প্রায় ৪২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ খাদ্য সংকটে ভোগেন। অপুষ্টিতে ভোগা সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যাও এই মহাদেশের। তবে আফ্রিকা মহাদেশে ক্ষুধার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সার ও কীটনাশকের। এছাড়া চরম আবহাওয়াজনিত পরিস্থিতির কারণে খাদ্যাভাবের প্রভাব আরও গুরুতর হতে পারে।