আটলান্টিক সাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া সাবমেরিনে (টাইটান) থাকা পাঁচ আরোহীর কেউই জীবিত নেই।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে এই খবর জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড। একইভাবে খবরটি নিশ্চিত করেছে ওই সাবমেরিন পরিচালনাকারী সংস্থা “ওশেনগেট”। ধারণা করা হচ্ছে, পানির প্রচণ্ড চাপে ডুবোযানটি বিধ্বস্ত হয়। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বৃহস্পতিবার টাইটানিকের কাছে ছোট আকারের সাবমেরিনটির কিছু ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করে উদ্ধারকারী দল। এরপরই খবর আসে ওই ধ্বংসাবশেষ টাইটান থেকে খুলে পড়া কিছু অংশ। তখনই অনেকটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে টাইটান এবং ভেতরে থাকা পাঁচজনের পরিণতি।
তারপরও অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কানাডা, ফ্রান্সসহ আরও কয়েক দেশের উদ্ধারকারী দল। সব তথ্য মিলিয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে টাইটানের পরিণতি সম্পর্কে ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাগার।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, “আমাদের মনে হচ্ছে সাবমেরিনটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করতে পেরেছি।”
টাইটান ধ্বংসের কারণ কী তা স্পষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। পাঁচ অভিযাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা যাবে কি-না, এ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
এমন খবরে তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্যাট্রিক রাইডার।
উদ্ধার অভিযানের শুরুতে সমুদ্রের তলদেশ থেকে শব্দ পাওয়ার পর যাত্রীরা জীবিত আছেন বলে আশা জেগেছিল। পরে বিশেষজ্ঞরা জানান, এই শব্দ নিখোঁজ সাবমেরিন থেকেই যে এসেছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পানির তলদেশে চলাচলে সক্ষম ওই রোবটযানটি কানাডার জাহাজ হরাইজন আর্কটিক থেকে পরিচালনা করা হচ্ছিল।
অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও উদ্ধারকর্মীরা আশা ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তাই তারা উদ্ধার অভিযান চালিয়ে যেতে থাকেন।
তারমধ্যেই স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে খবর আসে, আটলান্টিকের তলদেশে পাঠানো রোবটযানটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে অন্য কিছুর ধ্বংসস্তূপ খুঁজে পেয়েছে।
টাইটানের ক্যাপসুলে থাকা পাঁচ আরোহীর মধ্যে ওশানগেটের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশও (৬১) ছিলেন।
এছাড়া ছিলেন- ব্রিটিশ ধনকুবের, বিমান সংস্থা অ্যাকশন এভিয়েশনের চেয়ারম্যান হামিশ হার্ডিং (৫৮), পাকিস্তানের এংরো কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯), ফরাসি পর্যটক পল অঁরি নারজিলে (৭৭)।
ট্রাকের আকারের টাইটানের দৈর্ঘ্যে ছিল ২২ ফুট। বৃহস্পতিবার আটলান্টিকের তলদেশে রোবটযানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়ার খবর আসার পর জানা যায় ওই ধ্বংসাবশেষ আসলে টাইটানের বহিরাংশ থেকে খুলে পড়া অংশ।
১৯১২ সালে ইংল্যান্ডের নিউ সাউদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রায় বিশাল আইসবার্গের ধাক্কায় ডুবে গিয়েছিল তখনকার সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ টাইটানিক, প্রাণ গিয়েছিল দেড় হাজার মানুষের।
দুই টুকরো হয়ে যাওয়া টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষটি রয়েছে আটলান্টিকের ৩ হাজার ৮০০ মিটার নিচে। ১৯৮৫ সালে ওই ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া যায়। আটলান্টিক মহাসাগরের এ এলাকাটি কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেইন্ট জোন্স থেকে ৭০০ কিলোমিটার দক্ষিণে।
আইসবার্গের ধাক্কায় বিশালাকারের টাইটানিকের ডুবে যাওয়ার ঘটনা সে সময়ে মানুষের কাছে অনেকটাই অবিশ্বাস্য ছিল। নিজের প্রথম যাত্রাতেই ডুবে যাওয়া টাইটানিকের নাম এখনো ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে। পুরো বিশ্বের মনযোগ কেড়ে নেওয়া আরো একটি দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গেলো এই টাইটানিকের নাম।