মিয়ানমারে ২০২৫ সালে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীন জান্তা সরকার।
সামরিক বাহিনী সমর্থিত রাজনৈতিক দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির এক নেতার বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
২০২০ সালের নির্বাচনে অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সংখাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়লাভ করে। তবে ২০২১ সালে অভ্যুত্থানে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করেন।
এরমধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর গণতন্ত্রের জন্য ১০ বছরের লড়াই ভেস্তে যায়। দেশ জুড়ে সহিংসতা নেমে আসে। সেনাবাহিনী এখন দেশটিতে বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই করছে।
এমন অবস্থায় সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির জ্যেষ্ঠ এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেন, “২০২৫ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তিনি বলেন, “জনশুমারির মাধ্যমে জাতীয় ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পর নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ আরম্ভ হবে। ২০২৪ সালের পুরো বছর ধরে চলবে এই কাজ।”
তবে জান্তার মুখপাত্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মঙ্গলবার মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ৩৬টি রাজনৈতিক দলকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
তবে নির্বাচন কবে হবে- সে সংক্রান্ত কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি কমিশনের বিবৃতিতে।
সামরিক সূত্র জানায়, সারা দেশে একটি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা ব্যবহার করা হবে।
এর আগে, মার্চ মাসে নির্বাচন কমিশন সু চির দল এনএলডিকে বিলুপ্ত করে দেয়। কারণ ব্যাখ্যা করে তারা জানায়, নতুন আইনে দলটি নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
১৯৮৮ সালে এনএলডি প্রতিষ্ঠা হয়। ১৯৯০ সালে নির্বাচনে দলটি জয় পায়। তবে সামরিক জান্তা সেই ফল বাতিল করে।
এরপর এই দলের নেতৃত্বে মিয়ানমারে গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ লড়াই হয়েছে। এরই জেরে ২০১৫ ও ২০২০ সালে সামরিক সমর্থিত দলের বিরুদ্ধে বড় বিজয় পায় সু চির দল এনএলডি।
তবে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে জান্তার রক্তাক্ত ক্র্যাকডাউনে দলের নেতৃত্ব ধ্বংস হয়ে গেছে। কয়েক দশকের মধ্যে দেশে প্রথম মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহারে জান্তা কর্তৃক একজন সাবেক আইন প্রণেতাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
জান্তা জানায়, তারা দেশের বিভিন্ন অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে না। এজন্য তারা বারবার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা পিছিয়ে দিয়েছে।
স্বাধীন বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন এএফপিকে বলেছেন, “এটি অত্যন্ত অনিশ্চিত যে কখন এবং কখন নির্বাচন হবে। কোনো সুস্পষ্ট সময়সূচী নেই।”
তিনি বলেন, “এটি পুনরায় জোর দেওয়া উচিত নয়। তবে যে কোনো পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় যে কোনো ভোটের বৈধতা ও অনর্থক হবে।”
মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং গত শনিবার রাষ্ট্রায়ত্ত দৈনিক গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমারকে এক সাক্ষাৎকারে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “একটি আদমশুমারি সম্পন্ন হওয়ার পরেই একটি নির্বাচন হতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, মিয়ানমারে জান্তার তত্ত্বাবধানে যদি কোনো নির্বাচন হয় সে ক্ষেত্রে তা হবে নির্বাচনের নামে ধোঁকাবাজি।
তবে মিয়ানমারের প্রধান মিত্র ও অস্ত্র সরবরাহকারী রাশিয়া এই নির্বাচনের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে।
সামরিক সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান খিন ই বলেছেন, “তার দল ভবিষ্যত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
বিভিন্ন হুমকি পেলেও তার দল প্রস্তুত বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি এগিয়ে যাচ্ছি... এই সময়টা আমাদের দলকে অনুপ্রাণিত করার সময়।”
১৯৪৮ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতার পর কয়েক দশক ধরে মিয়ানমার শাসন করছে ও আগেও দেশটির অর্থনীতি ও রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করছে সেনাবাহিনী।
দেশটিতে প্রায় প্রতিদিনই বোমা বিস্ফোরণ ও যুদ্ধ চলছে। সহিংসতায় হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ আটকা পড়েছ।