ইউক্রেনকে ইউরেনিয়াম বর্জ্য থেকে বানানো ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী জানুরায়িতে ইউক্রেনকে ৩১টি আবরাম কামান দেবে ওয়াশিংটন। তার সঙ্গে তারা ইউরেনিয়াম বর্জ্য থেকে বানানো গোলাও দিচ্ছে। ইউক্রেনকে তারা ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের যে নতুন অস্ত্র প্যাকেজ দিচ্ছে, তার মধ্যে এই গোলা দেওয়ার বিষয়টি আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাশিয়া বলেছে, এই সিদ্ধান্ত অমানবিক। এর ফলে মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের ওপর কী প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন।
ইউরেনিয়াম যুদ্ধাস্ত্র কী
ইউরেনিয়ামকে সমৃদ্ধ করার পর তার থেকে বর্জ্য পাওয়া যায়। সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামে ইউ-২৩৫ আইসোটোপ প্রচুর পরিমাণে থাকে, যা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে লাগে এবং যা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র তৈরি হয়।
আর ইউরেনিয়াম বর্জ্যে থাকে ইউ-২৩৮ আইসোটোপ, যা অনেক কম তেজস্ক্রিয়। এই বর্জ্য দিয়েই কামানের গোলা তৈরি হয়। অন্য অস্ত্র বা গোলা-গুলি তৈরির কাজে লাগে। এর জন্য ইউ-২৩৮ আইসোটোপকে টাইটেনিয়ামের মতো ধাতুর সঙ্গে মেশাতে হয়।
এই ধরনের গোলা শক্ত ধাতুর আবরণ ভেদ করতে পারে। তাই ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র হিসাবে এটা খুবই কার্যকর। তাছাড়া অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলেই গোলায় থাকা ইউরোনিয়াম রিলিজ হয়ে যায় এবং ট্যাংকের ভেতরে থাকা সেনারা পুড়ে মারা যান। কোনো ট্যাংক বা সাঁজোয়াযানে যদি অস্ত্র বা জ্বালানি থাকে, তাহলে সেখানে বিস্ফোরণও হয়।
বিশ্বের ২১টি দেশের হাতে এই ধরনের অস্ত্র আছে। যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করেছে, “ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও সাবেক যুগোস্লাভিয়ায় তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করেছে।”
প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে
সাধারণ ইউরেনিয়ামের তুলনায় এই ধরনের ইউরেনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা ৪০% কম। তিন ফুট দূর থেকে তা মানুষের পোশাক বা চামড়া ভেদ করতে পারে না। কিন্তু খুব কাছ থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে এর সংস্পর্শে থাকলে তা মানুষের দেহকে প্রভাবিত করে এবং যার জেরে ক্যান্সার হতে পারে।
এই অস্ত্র কতটা ক্ষতিকর তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ আছে। ইন্টারন্যাশনাল ফিজিসিয়ানস ফর প্রিভেনশন অব নিউক্লিয়ার ওয়েপনস বলছে, এটা মানুষের যথেষ্ট ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আইএইএ মনে করে, এই অস্ত্র একেবারেই ক্ষতিকর নয়।
ইউরোপীয় কমিশনের রিপোর্টও বলছে, পরিবেশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাবের কোনো প্রমাণ পাওয়া য়ায়নি।
তবে মাটি ও ভূগর্ভস্থ জলের ওপর এই অস্ত্রের প্রভাব কতটা পড়বে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম নয়, এর আগে যুক্তরাজ্যও ইউক্রেনকে এই ধরনের গোলা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।