গাজার টানেলগুলো বন্যা প্রতিরোধী করে তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) সংগঠনের মুখপাত্র ওসামা হামদান এ তথ্য জানান। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, হামাসের টানেলগুলোতে প্লাবিত করার পরিকল্পনা নিয়ে সেগুলোর সামনে পাম্প স্থাপন করে ইসরায়েল।
গাজার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিভিন্ন জায়গায় ইসরায়েলের সেনা এই কাজ (পাম্প দিয়ে টানেল প্লাবিত) শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, “এই কৌশলের মাধ্যমে টানেল ধ্বংস হবে ও টানেলে লুকিয়ে থাকা হামাস যোদ্ধারা বাইরে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হবে।”
যদিও এই কর্মকাণ্ডের কারণে গাজায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ঝুঁকিতে পড়বে।
নভেম্বর মাসের দিকে উত্তর গাজার আল-শাতি শরণার্থী শিবির থেকে প্রায় এক মাইল উত্তরে কমপক্ষে পাঁচটি পাম্প জড়ো করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এই পাম্প দিয়ে ভূমধ্যসাগর থেকে পানি উত্তোলন এবং ঘণ্টায় কয়েক হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত করা যাবে। এগুলো দিয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সবগুলো টানেলকে ভাসিয়ে দেওয়া সম্ভব।
ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, তারা ৮০০টি টানেল চিহ্নিত করেছে। যদিও তারা স্বীকার করছে, হামাসের টানেল নেটওয়ার্ক এর চেয়েও অনেক বড়।
নভেম্বর মাসেই টানেলে পানি প্লাবিত করার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করে ইসরায়েল। এটির সম্ভাব্যতা, সামরিক কার্যকারিতা ও পরিবেশগত প্রতিক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়।
হামাস মুখপাত্র ওসামা হামদান বলেন, “দক্ষ ও শিক্ষিত প্রকৌশলীরা টানেলগুলো বানিয়েছেন। এগুলো প্রতিরোধের অংশ। এগুলো বন্যায় ভাসিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে সম্ভাব্য ধরনের আক্রমণের কথা বিবেচনা করে তৈরি করা হয়েছে।”
এছাড়া হামদান গাজায় থাকা ইসরাইয়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে সম্ভাব্য নতুন আলোচনার অগ্রগতির আশা কম বলে মন্তব্য করেছেন। এখনো উপত্যকাটিতে হামাসের কাছে প্রায় ১৩০ জন ইসরায়েলি বন্দী রয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার ইসরায়েলের প্রায় ১২০০ জন নিহত হন। জবাবে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৮ হাজার ৬০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
একইসাথে গাজা উপত্যকার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় ৮০ ভাগই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যারা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়ে মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন।
তেল আবিব গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর এতটা নির্মমভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে যে, জাতিসংঘের কর্মকর্তারা এটিকে “পৃথিবীর মধ্যে জাহান্নাম” বলে অভিহিত করেছেন।
একইসাথে উপত্যকাটিতে খাদ্য, জ্বালানি, পানি ও বিদ্যুতের প্রবেশাধিকারও কঠোরভাবে সীমিত করেছে দেশটি।
এদিকে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত পাশ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ ১০টি দেশ এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। কিন্তু বাকি ১৫৩টি দেশ সিদ্ধান্তে সমর্থন করেছে।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের কূটনীতিকেরা বলেছেন, “এ এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। যেখানে এতগুলো দেশ এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করলো।”
ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য, “গাজার লড়াই নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে সমবেদনা দেখা যাচ্ছে, তারই বহিঃপ্রকাশ এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। যুক্তরাষ্ট্রকেও এবার তা বুঝতে হবে। মানুষের স্বর শুনতে হবে। তবে ইসরায়েল ফের জানিয়েছে, এখনই লড়াই থামছে না।”
চেক রিপাবলিক, অস্ট্রিয়া, প্যারাগুয়ের মতো দেশ এতদিন যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। তারা ইসরায়েলকে সমর্থন করেছে। অন্যদিকে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ ২৩টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।
এর আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও একইরকমের একটি ভোট হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে নিজের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিল। সেই ভোটের পর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় বিশেষ বৈঠকের ডাক দিয়েছিল আরব ও মুসলিম দেশগুলো। সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত সব দেশ আইনত মানতে বাধ্য না হলেও এই সিদ্ধান্ত একটি চাপ তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।