চীনের উচ্চপদস্থ বিলিয়নিয়ার ব্যাংকার বাও ফ্যান তার প্রতিষ্ঠান রেনেসাঁ হোল্ডিংসের সব পদ-পদবি থেকে পদত্যাগ করেছেন।
বাও ফ্যান পরিচিত ছিলেন একজন ডিলমেকার হিসেবে; অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্যের জগতে কোনো চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন সফল মানুষ।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে চীনের প্রযুক্তিখাতে বিশাল অঙ্কের সব চুক্তির পেছনে ছিলো চায়না রেনেসাঁ। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে উধাও হন ‘‘চায়না রেনেসাঁ’’র এই প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও।
একই বছরের জুন মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদসংস্থা জানায়, দেশটির কেন্দ্রীয় দুর্নীতি দমন সংস্থার হাজতে রয়েছেন শীর্ষ ব্যাংকার বাও ফান।
পুঁজিবাজার বিষয়ক প্রকাশনা ‘‘ইকোনমিক অবজারভারে’’র প্রতিবেদন বলছে, হংকংয়ে নিবন্ধিত ‘‘চায়না রেনেসাঁ’’র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও বাও ফানকে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি উঠিয়ে নিয়ে যায় চীনের কেন্দ্রীয় শৃঙ্খলা রক্ষা কমিশন (সিসিডিআই)। তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অবৈধ কর্পোরেট লেনদেনের কথা বলছে সিসিডিআই।
প্রতিষ্ঠাতা গায়েব হয়ে যাওয়ার পর চায়না রেনেসাঁ’’র শেয়ার মূল্য ২০% এরও বেশি কমে যায় ও এক পর্যায়ে পুঁজিবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাওয়ের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব না হওয়ায় কোম্পানিটির বার্ষিক হিসাব প্রকাশেও বিলম্ব ঘটে।
অবশেষে এই ধনকুবের ব্যাংকার তার প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করলেন। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
রেনেসাঁ হোল্ডিংসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাস্থ্যগত কারণে ও পরিবারকে বেশি সময় দেওয়ার জন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন।
বাও ফ্যানের জায়গায় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জি ই জিং।
প্রতিষ্ঠানের বিবৃতিতে বলা হয়, বোর্ডের সঙ্গে তার কোনো মতবিরোধ নেই। তার পদত্যাগের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য কোনো বিষয় নেই। যা শেয়ারহোল্ডারদের নজরে আনা দরকার।
যদিও এতে বাওয়ের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
চীনের শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে চুক্তির মধ্যস্থতাকারী হিসাবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ ব্যক্তি বাও ফান, যার মধ্যস্থতায় ২০১৫ সালে দেশটির শীর্ষ দুই ফুড ডেলিভারি কোম্পানি মেইতুয়ান এবং ডিয়ানপিং এর মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। কোম্পানি দুইটির যৌথ মালিকানায় চালিত “সুপার অ্যাপ” এই মুহুর্তে চীনে অন্যতম অপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপ।
চীনা বিলিয়নিয়াররা কেন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে?
ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, বাও “কোনো একটা তদন্তে সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থাকে সহযোগিতা” করছেন কেবল।
তারা আরও বলেছিল, প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে সহযোগিতা করবে। প্রাসঙ্গিক পিআরসি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে কোনো আইনানুগ অনুরোধে সহায়তা করবে।
এই বিষয়ে এটিই প্রথম ও একমাত্র কোনো ভাষ্য ছিল এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে নামে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। বাও ছাড়াও ওই সময় আর্থিক খাতের আরও ডজনখানেক শীর্ষ ব্যবসায়িক কর্মকর্তাকেও আটক করে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। অবশ্য তাদের অনেকেই ফিরে এসেছেন।
এদের মধ্যে ছিলেন আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা। ২০২০ সালে বাজার নিয়ন্ত্রকদের সমালোচনা করার পর তিন মাসের জন্য উধাও হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া রয়েছেন চীনের বিখ্যাত ফোসুন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গুও গুয়াংচ্যাং। ২০১৫ সালে তাকেও দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
যদিও বিশ্লেষকদের ধারণা, দুর্নীতিবিরোধী ওই অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল দেশের ভেতর বাইরের হুমকির থেকে শি জিনপিংয়ের মেয়াদকে শক্তিশালী করা।