প্রায় চার মাস ধরে ইসরায়েলের চলমান হামলায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অন্তত ১৭ হাজার শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘের শিশু সংস্থা (ইউনিসেফ)।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) ইউনিসেফ বলছে, “গাজার প্রায় সব শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন।”
এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের জন্য নিয়োজিত ইউনিসেফের যোগাযোগবিষয়ক প্রধান জোনাথন ক্রিকক্স বলেছেন, “গাজার প্রতিটি শিশুর ক্ষতি ও শোকের হৃদয়বিদারক গল্প রয়েছে।”
জেরুজালেম থেকে ভিডিও-লিংকের মাধ্যমে একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “১৭,০০০ সংখ্যাটি একটি অনুমান, কারণ বর্তমান পরিস্থিতিতে তথ্য যাচাই করা প্রায় অসম্ভব।”
জনাথান বলেন, “পরিবারহারা অনেক শিশু তাদের নাম বলতেও পারে না। তারা একটি ভয়ংকর নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে নিজেদের।”
ইউনিসেফ পরিবারহারা শিশুদের দুইভাবে ব্যখ্যা করেছে। এক “বিচ্ছিন্ন” শিশু, যারা মা-বাবা ছাড়া আছে, কিন্তু আত্মীয়-স্বজন সঙ্গে আছে। অন্যদিকে “সঙ্গীহীন” শিশু, যারা বিচ্ছিন্ন এবং আত্মীয়-স্বজন ছাড়া থাকছে।
জনাথান বলেন, “গাজায় শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অঞ্চলের প্রায় এক মিলিয়ন শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “গাজার শিশুদের ক্রমাগত উদ্বেগ, ক্ষুধা হ্রাস ও ঘুমাতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তারা যখনই বোমা হামলার শব্দ শুনে তখন তারা মানসিকভাবে আতঙ্কিত হয়।”
হামলা শুরুর আগেই ইউনিসেফ বলেছিল, “গাজার পাঁচ লাখেরও বেশি শিশুর সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন।”
জনাথান বলেন, “এখন পরিস্থিতি এমনটা দাঁড়িয়েছে যে, উপত্যকাটির প্রায় সকল শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রয়োজন। যা সংখ্যায় ১০ লাখেরও অধিক।”
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২৭,১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের মধ্যে প্রায় ১১,৫০০ জন শিশু।
কার্যকর চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার অভাবের কারণে প্রায় ৬৬,২০০ জনেরও বেশি শিশু আহত হয়েছে। আর নিখোঁজ ও ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে আরও অনেকে।
এদিকে ইসরায়েলি সৈন্যরা উত্তর, মধ্য এবং পূর্ব গাজার বেশিরভাগ অঞ্চল ঘিরে ফেলেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে উপত্যকাটিতে বসবাসরত পরিবারগুলি বেশ কয়েকবার তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। অনেকেই এখন দক্ষিণে রাফাহ সীমান্তে আটকে আছে। এটিকেও ইসরায়েল তাদের আক্রমণের পরবর্তী লক্ষ্য বলে বিবেচনা করছে।
এছাড়া বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় অনেক ফিলিস্তিনিকে গুলি করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে যারা দক্ষিণাঞ্চলের দিকে যাচ্ছে তারা প্রায়শই উপত্যকাটির অন্যান্য অংশে তাদের আত্মীয়দের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছে না। বিশেষ করে ব্ল্যাকআউটের সময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
জনাথান বলেন, “চলমান যুদ্ধের সাথে শিশুদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবুও তারা এমনভাবে ভুক্তভোগী হচ্ছে যা কোনো শিশুর ক্ষেত্রেই হওয়ার কথা নয়। ৭ অক্টোবর কিংবা তারপর থেকে আমরা যে সহিংসতা দেখেছি তা কোনো শিশুর জন্য কখনই কাম্য নয়।”
পরিবার কিংবা আত্মীয়দের থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুদের সন্ধান পেতে ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দিতে একটি যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান ইউনিসেফের এই কর্মকর্তা।