একাধারে লেবাননে হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান এবং সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সম্ভাব্য উত্তরসূরি ছিলেন সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিন। তবে গত বছরের ৩ অক্টোবর বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হিজবুল্লাহর মহাসচিব সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং সংগঠনটির রাজনৈতিক পরিষদের চেয়ারম্যান সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিনের মরদেহ দক্ষিণ লেবাননে সমাহিত করা হয়।
কে এই হাশেম সাফিউদ্দিন?
হাশেম সাফিউদ্দিন ১৯৬৪ সালে দক্ষিণ লেবাননের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০-এর দশকে তিনি তার আত্মীয় সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সঙ্গে ধর্মীয় বিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য ইরানের ধর্মীয় নগরী কোমে আসেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৩ সালে তিনি লেবাননের শিয়াদের ইসলামি আইন পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ আলী আল-আমিনের মেয়েকে বিয়ে করেন। পরে নাসরুল্লাহ ১৯৯৪ সালে হাশেম সাফিউদ্দিনকে হিজবুল্লাহর বৈরুত অঞ্চলের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন। এরপর তিনি ১৯৯৫ সালে জিহাদ কাউন্সিলের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন, যা হিজবুল্লাহর সামরিক কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল। পরবর্তী সময়ে তাকে নির্বাহী পরিষদের প্রধান হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
একাধিক বার তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লেও ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর সাফিউদ্দিন লেবাননের বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হন।
তার মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা আগে সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিন প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদীকে লিখেছিলেন, “আমার জীবনের আর খুব কমই বাকি আছে, তুমি কি চাও যে আমি তোমাকে না দেখেই চলে যাই?”
হাশিম সাফিউদ্দিনের মৃত্যুতে সর্বোচ্চ নেতাসহ ইরানি নেতৃবৃন্দের বার্তা
লেবাননের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান সাইয়্যেদ হাশেম সাফিউদ্দিনের মৃত্যুবরণকে কেন্দ্র করে বার্তা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনেয়ীসহ অন্যান্য ইরানি নেতৃবৃন্দ। সর্বোচ্চ এই নেতা তার বার্তায় বলেছিলেন, “শহিদ সাফিউদ্দিন হিজবুল্লাহর শীর্ষ ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। তিনি আজীবন সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর সহযোগী ও সহচর ছিলেন। শহিদ সাফিউদ্দিনের মতো নেতাদের পরিকল্পনা ও সাহসিকতায় হিজবুল্লাহ লেবাননকে বিপর্যয় ও খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল ইহুদিবাদী ইসরায়েলের হুমকি নস্যাৎ করার মাধ্যমে। ইসরায়েলের অত্যাচারী ও নিষ্ঠুর সেনাবাহিনী কখনো কখনো বৈরুত পর্যন্ত সমস্ত কিছু পদদলিত করতো। শহিদ সাফিউদ্দিন এবং নাসরুল্লাহ ফ্রন্টের অন্য মুজাহিদদের আত্মত্যাগ লেবাননের অখণ্ডতা রক্ষা করেছে এবং আগ্রাসী ও অপরাধী ইহুদিবাদী ইসরায়েলকে ব্যর্থ করে দিয়েছে।”
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিন ও লেবাননের মজলুম জনগণের প্রতিরক্ষায় ও প্রতিরোধ ফ্রন্টকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে হাশেম সাফিউদ্দিনের নানা বীরত্ব ও সংগ্রামী দিকের কথা তুলে ধরে বলেন, “নিঃসন্দেহে যতদিন মজলুম ফিলিস্তিনি ও লেবাননি জাতির বিরুদ্ধে জুলুম, অপরাধযজ্ঞ ও দখলদারিত্ব অব্যাহত থাকবে আগ্রাসী ইহুদিবাদী ও এর সহযোগীদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ ও জিহাদও জোরদার হতে থাকবে।”
ইরানের সংসদ স্পিকার মুহাম্মাদ বাকের কলিবফও হিজবুল্লাহর কার্য-নির্বাহী পরিষদের প্রধান হাশিম সাফিউদ্দিনের মৃত্যুতে অভিনন্দন ও সমবেদনা জানিয়ে বলেছিলেন, “সাফিউদ্দিন ছিলেন গাজা, ফিলিস্তিন ও লেবাননের প্রতি সহায়তা ও ইসলামের পবিত্রতার প্রতিরক্ষা এবং ইসলামী ঐক্যের প্রতীক। দখলদার ও হিংস্র পশু প্রকৃতির অধিকারী ইহুদিবাদীরা প্রতিরোধ যোদ্ধা ও মুজাহিদদের মোকাবেলায় ব্যর্থ ও অক্ষম হয়ে এবং প্রতিরোধ ফ্রন্টের শক্তিশালী কাঠামো বা সংগঠনের কোনো ক্ষতি করতে না পেরে প্রতিরক্ষাহীন জনগণের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে ও এবার এক পৈশাচিক অপরাধযজ্ঞ চালিয়ে প্রতিরোধ ফ্রন্টের অমর নেতৃবৃন্দকে শহিদ করেছে।”
ইরানের বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম হোসেইন মোহসেনি এজেয়িও এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “ইহুদিবাদী ইসরায়েল বিলুপ্ত হবার পথে রয়েছে এবং প্রতিরোধ অক্ষের নেতৃবৃন্দ ও কমান্ডারদের মৃত্যুতে ইহুদিবাদ-বিরোধী সংগ্রামে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না।”
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও হাশিম সাফিউদ্দিনের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে বলেছিল, “নিঃসন্দেহে প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের শাহাদাতের ফলে এই পথের সহযোগীদের ও বীর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের দৃঢ় ইচ্ছা ও বিশ্বাসে এবং মুসলিম জাতিগুলোর ও এ অঞ্চলের মুক্তিকামীদের মধ্যে ইসরায়েলি দখলদারিত্ব ও জুলুম আর বিরোধী লড়াইয়ে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে না।”