ভারতের গুজরাটের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি উড়োজাহাজ গতকাল বৃহস্পতিবার দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে হয়তো কোথাও পড়ে রয়েছে রাজস্থানের এক পরিবারের মোবাইল ফোনটি। হয়তো তা আর কখনো খুঁজেও পাওয়া যাবে না। আগুনে পুড়ে যেতে পারে। কিন্তু সেই ফোন দিয়ে তোলা একটি সেলফি ভয়াবহ এক ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে রয়ে গেল।
মোবাইল ফোনটি ভারতের রাজস্থানের এক চিকিৎসক দম্পতির। বিধ্বস্ত সেই উড়োজাহাজটির যাত্রী ছিলেন তারা। দুর্ঘটনায় এই দম্পতি এবং তাদের ৩ সন্তানেরই মৃত্যু হয়েছে। উড়োজাহাজে বসে পরিবারটি একটি সেলফি তুলেছিল। সেটিই এখন তাদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রয়ে গেল।
চিকিৎসক কোমি বিয়াস ভারতের উদয়পুরের একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। স্বামী প্রতীক জোশিও ছিলেন একজন লন্ডনপ্রবাসী চিকিৎসক। স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে থাকতে কোমি উদয়পুরে হাসপাতালের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ৩ তিন সন্তানকে নিয়ে তারা লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রাও শুরু করেন। তাদের চোখেমুখে যে সে সময় আনন্দ ছিল, তা সেলফিতেও স্পষ্টভাবে ফুঁটে ওঠেছে।
সেই সেলফিতে দেখা যায়, চিকিৎসক প্রতীক ও তার স্ত্রী কোমি এক পাশে বসা, দুজনের মুখেই হাসি স্পষ্ট। আরেক সারিতে রয়েছে তাদের আট বছরের মেয়ে মিরায়া ও পাঁচ বছরের যমজ ছেলে- নকুল ও প্রদ্যুত। ছোট দুই ছেলেকে দেখে মনে হচ্ছে তারা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করছে, আর মেয়ে মিরায়াও প্রাণ খুলে হাসছে।
প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যর বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রতীকের বাবা শহরের একজন খ্যাতনামা রেডিওলজিস্ট। আর কোমির বাবা পরিকল্পনা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, নয়ন নামে প্রতীকের এক স্বজন বলেন, ‘‘লন্ডনের ফ্লাইট ধরতে তারা বুধবার আহমেদাবাদে গিয়েছিল। স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতীক মাত্র দুই দিন আগে এখানে আসে। দুই পরিবারের সদস্যদের অনেকে এসে তাদের বিদায় জানায়।’’
কোমির ভাই প্রবুদ্ধ বলেন, “১০ বছর আগে প্রতীকের সঙ্গে কোমির বিয়ে হয়। প্রতীকের এক বোনও রয়েছে। তিনি একজন প্রকৌশলী।”
প্রতীক-কোমি দম্পতি ও তাদের সন্তানেরা যে উড়োজাহাজে ছিলেন, সেটি গতকাল আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পর মাত্র ৩২ সেকেন্ড আকাশে থাকার পর এটি নামতে শুরু করে এবং স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৩৮ মিনিটের দিকে তা প্রচণ্ডভাবে বিস্ফোরিত হয়।
বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজটিতে মোট ২৪২ আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ২৩০ জন যাত্রী, ১০ জন কেবিন ক্রু ও ২ জন পাইলট ছিলেন।
বিস্ফোরেণের সেই ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, উড্ডয়নের সময় বিমানটি ঠিকভাবে ওপরে ওঠতে পারছিল না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্ভবত ইঞ্জিন যথেষ্ট শক্তি তৈরি করতে পারছিল না।
সৌরভ ভাটনাগার নামের একজন সাবেক পাইলট ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, ‘‘উড়ালের শুরুটা একদম ঠিকঠাক ছিল। তবে চাকার গিয়ার তুলতে যাওয়ার আগেই উড়োজাহাজটি নিচে নামতে শুরু করে। এমনটা তখনই হয়, যখন ইঞ্জিনের শক্তি কমে যায় বা উড়োজাহাজ ওপরে ওঠার ক্ষমতা হারায়। তবে ঠিক কী কারণে এমনটা হলো, সেটা তদন্তেই জানা যাবে।’’
উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার এ ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু একজনই বেঁচে ফিরেছেন। তিনি হলেন ৪০ বছর বয়সী বিশ্বাস কুমার রমেশ। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ নাগরিক। ভারতে বেড়ানো শেষে যুক্তরাজ্যে ফিরছিলেন তিনি।