বর্তমান সময়ে এসে বাংলা একাডেমির অনেক পুরনো প্রকাশনাই পাঠকদের হাতে পৌঁছায় না। পুনঃপ্রকাশনার অভাবে প্রথম সংস্করণের পর অনেক বই ও ম্যাগাজিনই হারিয়ে গেছে
সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রসার এবং গবেষণা ও প্রকাশনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার প্রয়াসে ১৯৫৫ সালে যাত্রা শুরু হয় বাংলা একাডেমির। উল্লেখিত লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমিই সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ।
কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে বাংলা একাডেমির অনেক পুরনো প্রকাশনাই পাঠকদের হাতে পৌঁছায় না। পুনঃপ্রকাশনার অভাবে প্রথম সংস্করণের পর অনেক বই ও ম্যাগাজিনই হারিয়ে গেছে।
বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বিভিন্ন প্রকাশনার মোট ৫,৪৭০ টি সংস্করণের ৭০%-ই এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে লেখা রয়েছে, “দেশজ সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সমকালীন শিল্প ও সাহিত্য সংরক্ষণ এবং গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির মানসিক বিকাশ ও উৎকর্ষ সাধন।”
তবে এমিরেটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন, “বাংলা একাডেমি তার মূল লক্ষ্য অনুযায়ী কাজ করছে না।”
বিশিষ্ট এই সাহিত্য সমালোচক বলেন, “বইয়ের কখনও মৃত্যু হয় না, তাই সব বই-ই পুনরায় ছাপানো যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, একাডেমির দায়িত্ব হলো গবেষণা, অনুবাদ এবং মূল্যবান সাহিত্য সংগ্রহ করা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, “আমার কাছে কিছু বই আছে যেগুলো এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না। কিন্তু সেগুলো পুনঃমুদ্রণযোগ্য এবং পাঠক চাহিদা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অমর একুশে বইমেলা আয়োজন করা বাংলা একাডেমির দায়িত্ব নয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসে তারা সেদিকেই বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছে। বড় একটি সময় ব্যয় হচ্ছে এক্ষেত্রে। মেলা আয়োজনের দায়িত্ব প্রকাশকদের ওপর হস্তান্তর করা যেতে পারে।”
প্রতিষ্ঠানটি তার মূল লক্ষ্য অর্থাৎ বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে গবেষণা থেকে সরে গেছে মন্তব্য করে তিনি প্রশ্ন করেন, এমতাবস্থায় সাহিত্য কীভাবে সমৃদ্ধ হবে?
বাংলা স্বরবর্ণকে সংক্ষিপ্ত করে বাংলা একাডেমি বড় ভুল করেছে বলেও মনে করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিষয়টিকে ভাষার জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন তিনি।
তবে বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান মনে করেন বাংলা একাডেমি সঠিক পথেই হাঁটছে।
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “গবেষণা ও প্রকাশনাকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে বাংলা একাডেমি তার প্রতিষ্ঠাকালীন লক্ষ্য অনুযায়ী সঠিক পথেই হাঁটছে।”
তবে এবিষয়ে ভাষা সৈনিক রেজাউল করিমের বক্তব্য অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতোই।
রেজাউল করিম বলেন, “বর্তমানে অনেক গবেষণাভিত্তিক বই বাংলা একাডেমির সংগ্রহে নেই। তাদের উচিত চাহিদানুযায়ী সেগুলো মুদ্রণ করা। অন্যথায় ভবিষ্যতে মানুষ এসব দুর্লভ বই থেকে বঞ্চিত হবে।”
তবে প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রণ বিভাগের পরিচালক ড. জালাল আহমেদ ঢাকা ট্রিবিউনকে জানান, বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সব বই-ই গবেষণাভিত্তিক।
তিনি বলেন, “বইয়ের পুনঃমুদ্রণের ক্ষেত্রে আমরা দু'টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। কোনো লেখক যথাযথ প্রক্রিয়ায় আমাদের কাছে এসে বিষয়টি জানালে আমরা তার দাবিটি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিই।”
স্বাধীনভাবে কোনো বইয়ের চাহিদা যাচাই করে পুনর্মুদ্রণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলেও জানান ড. জালাল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে কিছু বিখ্যাত লেখক ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বইয়ের পুনর্মুদ্রণ করা হবে।
বাজারে নেই ৭০% বই
প্রতিষ্ঠার দুই বছরের মাথায় বাংলা ভাষায় বই ও ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে শুরু করে বাংলা একাডেমি। ১৯৭১ সালের মধ্যে ৩১৭টি বই ও জার্নাল প্রকাশিত হয় প্রতিষ্ঠানটি থেকে।
৬৫ বছরের ইতিহাসে বিভিন্ন বইয়ের মোট ৫,৪৭০টি সংস্করণ প্রকাশ করেছে তারা। কিন্তু প্রথম সংস্করণের পর তার বেশিরভাগই আর পুনর্মুদ্রিত না হওয়ায় সেগুলো এখন আর কিনতে পাওয়া যায় না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চলতি ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সংস্করণগুলোর ৩,৯৪৮টি-ই বাজারে নেই।
অমর একুশে বইমেলা ২০২০-এ এখন পর্যন্ত ৪১টি বই প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। যার মধ্যে ২৬টি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে। পাশাপাশি ৬৩টি বইয়ের পুনর্মুদ্রণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
মতামত দিন