"চলো স্বপ্নের জাল বুনি" স্লোগান নিয়ে ২০২০ সালে কোভিড মহামারি সময়ে অনলাইনে গড়ে ওঠে কিশোর-কিশোরী সংঘ “সোনারতরী” । যেখানে বাংলাদেশের পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকে বয়ঃসন্ধিকালীন (১০-১৯ বছর) কিশোর-কিশোরীরা অনলাইনে যুক্ত হয়ে তাদের জীবনযাত্রা, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। দেশের বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞরাও এই প্ল্যাটফর্মে অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
মহামারি কেটে গেলেও “সোনারতরী”র কার্যক্রম থেমে যায়নি। কোভিডের পর অনলাইন থেকে বাইরে এসেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন শুরু করে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সোনারতরী “কিশোর-কিশোরী সংঘ পরিচালিত এবিসি আর্লি লার্নিং এন্ড ডে কেয়ার সেন্টার” আয়োজন করে "পরীক্ষা-র চাপ মোকাবিলা" বিষয়ক কর্মশালা।
কর্মশালা পরিচালনা করেন সোনারতরী-র প্রতিষ্ঠাতা, মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা (রুমী)। কর্মশালায় তিনি প্রথমে পরীক্ষা কী এবং কেন আমরা এ নিয়ে চাপ অনুভব করি এ বিষয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বলেন, “পরীক্ষার চাপ মোকাবিলা করতে আমরা তিনটি কাজ করতে পারি। তা হলো, ডিপ ব্রিদিং অনুশীলন; শরীরচর্চা, খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণ।”
তিনি কিশোর-কিশোরীদের একটি ভিডিও দেখিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও কিশোর-কিশোরীরা বিভিন্ন দলগত খেলা এবং পোস্টার প্রেজেন্টেশন করা হয়। পড়ার টেবিলে বসে এবং নিজের রুমেই কীভাবে মজার কিছু শরীরচর্চা করে পরীক্ষার চাপ দূর করা, সে অনুশীলনও করা হয়।
ফারজানা ফাতেমা বলেন, “পরীক্ষার জন্য প্রধান কাজ হচ্ছে, একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা অর্থাৎ আগামীকাল যদি ইংরেজি পরীক্ষা হয় আর আমি আজকে অংক করতে থাকি তাহলে সফল হতে পারব না। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে খাওয়া, ঘুম, বিশ্রাম ঠিক রাখতে হবে। সময় নির্ধারণ করে পড়া শেষ করার চেষ্টা করতে হবে এবং একই সাথে অনেকগুলো কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। যেমন, খাওয়া এবং একই সাথে পড়া, টিভি কিংবা মোবাইল দেখতে দেখতে পড়া ইত্যাদি কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।”
কর্মশালায় সামাজিকীকরণ বিষয়ে আলোচনা করেন, অনন্যা চৈতী। তিনি বলেন, “পরীক্ষার সিলেবাস সকলের এক হলেও পড়ার ধরন আমাদের সকলের আলাদা। আমরা কেউ অনেক ভালো ফলাফলের চাপ নিয়ে পড়ি। তাই পড়ালেখাও যে জানার জন্য আনন্দ নিয়ে পড়া যায় সেটাই হয়ত জানা হয়ে ওঠে না। তাই আমরা সবার আগে আনন্দ নিয়ে পড়তে বসব। বন্ধুদের সাথে সিলেবাস নিয়ে আলোচনা করব। কঠিন বিষয়গুলো বন্ধুরা কিভাবে পড়ে নিচ্ছে সেটা থেকে শেখার চেষ্টা করব।”
কর্মশালায় মো. ইরেশ সারোয়ার বলেন, “আমাদের সময়ও পরীক্ষা ভীতি ছিল, আমরা ভাবতাম এই চাপ নিয়েই আমাদেরকে পরীক্ষা দিতে হবে। তোমাদের জন্য এটি একটি চমৎকার আয়োজন যে পরীক্ষার চাপ মোকাবিলা কীভাবে করতে হয় তা তোমরা শেখার সুযোগ পেয়েছ।”
অনুষ্ঠান শেষে কিশোর-কিশোরীদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন এবিসি আর্লি লার্নিং এন্ড ডে কেয়ার সেন্টারের পরিচালক সোনিয়া ফারজানা আকরাম। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাইল্ড সাইকোলজিস্ট শামীমা সিরাজি সুমি, অভিভাবক মাকসুদা হোসেইন। ভলান্টিয়ার হিসেবে ছিলেন, আনোয়ারা বেগম দিশা, মাহফুজা আলী শর্মী, ফাহমিদা নাজনীন তীতলি। কিশোর-কিশোরী যারা দিনটিকে সফল করেছে তারা হলো আয়েশা, ইউসরা, আরিশা, সামরিন, আরশান, তারশীদ, তাহমিদ, নুসরা, সাদমান, নামিরা, তুর্জয়, মাহফুজা।