করোনাভাইরাস এড়াতে সামাজিক দূরত্ব ও বারবার হাত ধোয়ার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা, যা প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য আরও প্রতিকূল ও কঠিন অবস্থা তৈরি করেছে
“আমি একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। আমি দৃষ্টিহীন হওয়ায় কারণে হাত ও পায়ের স্পর্শে দৈনন্দিন কাজ কর্ম করে থাকি। আমার বাবার মৃত্যুর পর আমি খুব কষ্ট করে বিএ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। দীর্ঘদিন যাবৎ আমি একটি কাজের সন্ধান করে যাচ্ছি কিন্তু না পাওয়ায় আমি আজ অবধি পরিবারের উপর নির্ভরশীল। আমি কিছুদিন আগে আমার এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার ঘোষিত ‘লকডাউনের’ মধ্যে নিজের বাড়ি ফিরতে পারিনি। আমার মত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দৈনন্দিন কাজকর্ম হাতের স্পর্শ অনুভব করে অথবা অন্য কোনো অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সহযোগিতায় করতে হয়। আমার নিজের বাড়িতে সবকিছু পরিচিত ছিল। আত্মীয়ের বাসায় অবস্থানকালীন আমার খাওয়া-দাওয়া, গোসল করা, টয়লেটে যাওয়া থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজের জন্য কারও না কারও সাহায্য নিতে হয়। করোনাভাইরাস এড়াতে বিভিন্ন রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সাড়ে ছয় ফুট সামাজিক দূরত্ব ও বারবার হাত ধোয়ার কথা বলেছেন যা আমাদের মত মানুষের জন্য মানা কষ্টসাধ্য ব্যাপার। আমার পরিচিত অনেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির পরিবার আছে, যাদের একটা ঘরে সবাইকে থাকতে হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা হাতের স্পর্শে তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপন করলেও এই অবস্থায় আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার মারাত্নক ঝুঁকিতে। আমাদের হাত দিয়ে সবকিছু স্পর্শ করে চলতে হয় বিধায় এইহাত এখন আমাদের করোনা ঝুঁকির সহায়ক। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্মার্ট ফোনে একসেসঅ্যাবল সফটওয়্যার ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। গ্রাম বা একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের স্মার্ট ফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ বা সামর্থ্য নেই বললেই চলে সেই সাথে রয়েছে মোবাইল নেট ওয়ার্কের সমস্যা এবং উচ্চমূল্যের ডাটা প্যাকেজ যা কেনার সামর্থ্য অনেক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নেই। গ্রামের বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের বেশিভাগ মানুষের সচেতনতা নির্ভর করে সরকারি-বেসরকারি প্রচার-প্রচারণার উপর। সরকারের চেষ্টা থাকলে তা যথেষ্ট নয় প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং অনেক ক্ষেত্রে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অপ্রবেশযোগ্য। আমি আতঙ্কগ্রস্থ এবং সাথে খুব খারাপলাগা তৈরি হয়েছে”, কথাগুলো বলছিলেন সিলেটের মো. জামান (২৫) নামে এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫% মানুষ প্রতিবন্ধী (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৮)। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা মতে, মোট জনসংখ্যার মধ্যে যাদের প্রতিবন্ধীতা রয়েছে তাদের আক্রান্ত হবার সম্ভবনা বেশি। প্রতিবন্ধী মানুষ অনেক বেশি সংবেদনশীল, করোনাভাইরাস তাদের প্রতিদিনের পথচলায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসডিজির ( টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমালা) ১১ নং লক্ষ্যে বলা হয়েছে, যে কোনো ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য বিশেষ পরিসেবা এবং নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা প্রয়োজন।
করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রতিবন্ধীদের ধারণা ও সচেতনেতা বিষয়ে “ব্রীজ ফাউন্ডেশন” একটা জরিপ পরিচালনা করেছে। ব্রীজ ফাউন্ডেশন ২০১৩ সাল হতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশের সব বিভাগ থেকে ৮২.২% পুরুষ ও ১৭.৮% নারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এই জরিপে অংশ নেয়, যার মধ্যে ২.৭% দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, ৪৫.২% বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী, ২.৭% বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধী এবং ৪৯.৩% শারীরিক প্রতিবন্ধী।
২৭.৪% প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করোনাভাইরাস সম্পর্কে কিছুই জানে না। যার মধ্যে বেশির ভাগ মানুষই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সবচেয়ে বড় সমস্যা যোগাযোগের। তারা তাদের দৈন্দিন যোগাযোগ ইশারা ভাষার মাধ্যমে করে থাকে। তাদের যোগাযোগের জন্য এখন পর্যস্ত কোনো সহায়ক ডিভাইস বা সফটওয়্যার আবিস্কৃত হয়নি। ইশারা ভাষায় কথা বলার কারণে অনেক শব্দ অস্পষ্ট থেকে যায় ,যার দরুণ সঠিক তথ্য সময়মত বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা পায় না। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা কিছু না শুনতে পাওয়ার কারণে বেশি ভাগ মানুষ কথা বলার সময় শরীর স্পর্শ করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।
“আমার ছেলের সামান্য কিছু আয়ে আমাদের তিনজনের সংসার চলে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে তার আয় রোজগার বন্ধ। আমার ছেলে এ পরিস্থিতির জন্য খুব চিন্তিত, ঘরে থাকার কারণে সে সব ভুলে যাচ্ছে। কতদিন এমন থাকবে, আমরা কেমন করে চলবো, কি খাবো আল্লাহ জানে,” কথাগুলো বলছিলেন বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী সোহেলের (২৭) বৃদ্ধা মা।
করোনাভাইরাস প্রতিবন্ধীদেরকে আরও কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। সৌজন্য
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমিতে একুশে বই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সব টেলিভিশন চ্যানেলে ইশারা ভাষায় সংবাদ উপস্থাপনের কথা বলেন। বিটিভি এবং বেসরকারি টেলিভিশন দেশটিভি ছাড়া এ পর্যন্ত অন্য কোনো বেসরকারি টিভি চ্যালেন সংবাদ প্রচারের সময় ইশারা ভাষার ব্যবহার করে না। খবর নিয়ে জানা যায় দোভাষী সংকট এর একটি বড় কারণ। বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিদিনের তথ্য আইসিডিইআর এর সংবাদ বুলেটিংয়ে ইশারা ভাষায় প্রচার করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৭২.৬% প্রতিবন্ধী মানুষ চেষ্টা করছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও হাত ধোয়ার অভ্যাস অনুশীলন করতে। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টেলিভিশন, আত্নীয়-স্বজন ও বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে জানতে পারছে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা ও সচেতনতা সম্পর্কে। করোনাভাইরাসের জন্য সরকার ঘোষিত লকডাউনের কারণে প্রতিবন্ধী মানুষের মধ্যে অস্বাভাবিক এক পরিবর্তন এসেছে যার প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। এই পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অন্যের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। জরিপের তথ্য অনুসারে ৪৮% প্রতিবন্ধীমানুষ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। লকডাউন পরিস্থিতির কারণে ৬১.৬% কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী মানুষ আয়হীন হয়ে পড়েছে।
আইএফআরসি-ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ রেড ক্রস অ্যান্ড রেডক্রিসেন্টের পিএমইআর ম্যানেজার এবং সিআরপির সাবেক শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন আহমেদের মতে, সামাজিক যোগাযোগের সীমাবদ্ধতার কারণে শ্রবণ ও বাক, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। সবধরণের প্রতিবন্ধীদের কাছে কোভিড-১৯ বার্তা পৌঁছানোর জন্য প্রতিবন্ধীর ধরণ অনুযায়ী সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বিশেষভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য পরিসেবা দিতে হবে।
২০১৩ সালের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতে প্রয়োজনীয় সময় উপযোগী প্রতিবন্ধী বান্ধব পদক্ষেপই পারে এই অবস্থার মোকাবিলা করতে। এই জরিপের মাধ্যমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় তথ্য উঠে এসেছে যা করোনাভাইরাস সংক্রমণের সময়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করবে।
১. ২০১২ সালের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সনাক্তকরণ জরিপের মাধ্যমে শনাক্তকৃত এবং যে সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্তকরণের আওতার্ভুক্ত হয়নি তাদেরসহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে প্রতিটি বিভাগ থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডভিত্তিক প্রতিবন্ধীতার ধরণ অনুসারে আলাদা করে অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তার আওতায় আনতে হবে এবং সেই সাথে নারী ও শিশু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে তাদের প্রয়োজন ভিত্তিক অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
২. যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং যাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিয়েছে তাদের জন্য করোনাভাইরাসের সেবা প্রাদনকারী কেন্দ্র বা হাসপাতালগুলোতে আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে।
৩. যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা পান তাদেরকে এই সময়ে নির্ধারিত ভাতার চেয়ে বেশি ভাতা এবং নির্ধারিত সময়ের চেয়ে আগে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪. করোনাভাইরাস হতে সুরক্ষা সামগ্রী যেমন গ্লাভস, মাস্ক, স্যানেটাইজারসহ সকল প্রকার সুরক্ষা সামগ্রী সুলভে বিক্রয় ও বিনামূল্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মাঝে বিতরণে ব্যবস্থা করতে হবে এবং বিক্রয় ও বিতরণ কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫. সেবা প্রত্যাশী সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভিন্ন হটলাইন নম্বরের ব্যবস্থা করা এবং সেই সাথে ইশারা ভাষা ব্যবহারকারীদের জন্য শুল্কমুক্ত ইশারা ভাষার সুবিধাসহ ভিডিও কলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. বাক ও শ্রবণ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদাভাবে প্রবেশযোগ্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক ছবি ও তথ্য প্রচরণায় ইশারা ভাষা ও ব্রেইলের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৭. করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ বহনকারীসহ সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ঘোষিত লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতে অনলাইনে বিনামূল্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কোর্স চালু করা যেতে পারে।
দেশে লিঙ্গভেদে প্রতিবন্ধীতার তুলনামূলক চিত্র। সৌজন্য
মানুষের জড়তা, বিতর্ক, স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই প্রায় পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পরেছে কোভিড-১৯। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা প্রতিনিয়ত হু হু করে বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য করোনাভাইরাস মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে কাজ করছে। এই উদ্ভুত পরিস্থিতি প্রতিবন্ধী মানুষকে করেছে আরও অসহায়, বাড়িয়েছে অন্যের উপর নির্ভরশীলতা এবং থমকে দিয়েছে জীবন।
চলমান পরিস্থিতিতে মোকাবিলায় আমরা নেহাৎ শিশু। আমরা কেউ এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। দেশে মোট জনসংখার একটা বড় অংশ প্রতিবন্ধী মানুষ। দেশের সকল স্থানে প্রতিবন্ধী মানুষের সহজ প্রবেশাধিকারের সুযোগ কম থাকায় প্রতিবন্ধী মানুষেরা সচেতনার জন্য অনেকাংশে বিভিন্ন সেবামূলক সরকারি, বেসকারি ও স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল। করোনাকালীন সময়ে সবকিছু বন্ধ থাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভয় ও উৎকণ্ঠা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। কোভিড-১৯ এর সচেতনতামূলক বার্তা অপ্রতিবন্ধী মানুষের কাছে স্বাভাবিক নিয়মে পৌঁছালেও প্রতিবন্ধী মানুষের নিকট বিশেষ করে বাক ও শ্রবণ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য প্রতিকূল অবস্থা তৈরি করেছে।
দেশে অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে একজন উপার্জনহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নিজে এবং তার উপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের ঠিকে থাকা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং উপসর্গবাহী প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য হাসপাতালগুলোতে বিশেষ পরিসেবা থাকা জরুরি। এই ভয়াবহতায় একজন অসহায়, অস্বচ্ছল ও দুস্থ প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য আর্থিক সহায়তাসহ সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য প্রয়োজন বিশেষ স্বাস্থ্য পরিসেবা, নিরাপদ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বাসস্থান। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, নারী ও পুরুষের সমতা বজায় রেখে প্রতিবন্ধীতার ধরন অনুসারে নিরাপদ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং কাজের সঠিক পারিশ্রমিক প্রদানের কথা বলা হয়েছে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রায়। করোনাভাইরাস আমাদের জন্য বড় একটা উপলব্ধির জায়গা তৈরি করেছে, কাজের যোগ্যতা থাকা পরও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা জীবনের বেশিভাগ সময় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য হয়, অথচ আজ অপ্রতিবন্ধী মানুষেরাও ঘরবন্দী। কেউ কেউ আবার ঘরে বসে অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ করছেন এখন নেই কোনো আত্মঅহমিকার সুযোগ।
জরিপে অংশ গ্রহণকারী ৫৩.৮% নারী দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কর্মহীন দিন কাটাচ্ছেন শুধুমাত্র প্রতিন্ধীতার কারণে। করোনাভাইরাস আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে “ওয়ার্ক ফ্রম হোমের” মাধ্যমে ঘরে বসে কিভাবে অফিসের কাজ করতে হয়। যেটা সব ধরনের প্রতিবন্ধীসহ বিশেষ করে নারী প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা থেকে রক্ষা জন্য খুব প্রয়োজন। বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে প্রতিবন্ধী মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি। দেশের এই সংকটকালে, সরকারের পাশাপাশি সবাই নিজেদের অবস্থান থেকে একটু সহযোগিতাই পারে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে। প্রতিবন্ধী ও অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সকলের শক্তিকে বাংলাদেশের শক্তিতে পরিণত করায় হোক আমাদের সকলের সঞ্চয়।
স্বর্ণময়ী সরকার, সহ-সভাপতি ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিজ ফাউন্ডেশন
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। প্রকাশিত লেখার জন্য ঢাকা ট্রিবিউন কোনো ধরনের দায় নেবে না।
মতামত দিন