টেমস থেকে টাইগ্রিস কিংবা ভোলগা থেকে গঙ্গা, বিশ্বের ছোটবড় নদীগুলোর জন্য এক ভয়াবহ অশনিসংকেত অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ। মানুষ এবং পশু-পাখির পাশাপাশি নদীগুলোও আক্রান্ত হচ্ছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দূষণে। বিশ্বব্যাপী পরিচালিত এক নদী গবেষণার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
জীবননাশী ব্যাক্টেরিয়াগুলো দিন দিনই ওষুধের বিপক্ষে শক্তিশালী হয়ে উঠছে এই অ্যান্টিবায়োটিক দূষণের কারণেই। এর ফলে ব্যাক্টেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিকগুলোকে মানবদেহে ব্যবহারে অকার্যকর করে তোলার সক্ষমতা লাভ করে।
বিশ্বজুড়ে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়ার উত্থানকে গত মাসেই ‘বৈশ্বিক স্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। আশংকা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ এক কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়া।
সাধারণত মানুষ ও পশুর বর্জ্যের মাধ্যমে নদী এবং মাটিতে মিশছে অ্যান্টিবায়োটিক। এছাড়া পানি শোধনাগার এবং ওষুধ উৎপাদন কারখানাগুলো থেকেও অ্যান্টিবায়োটিক মাটি ও নদীতে মেশে। পুরো বিষয়টিকেই ভীতিকর ও হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
গত সোমবার (২৭ মে) ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে এক সম্মেলনে এ গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, টেমসের মতো বহুল পরিচিত ও পুরনো নদীগুলো অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ কবলিত। বহুক্ষেত্রেই নদীগুলোতে বিপৎজনক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক সনাক্ত করা হয়েছে। যা ব্যাকটেরিয়াকে আরো দ্রুত প্রতিরোধক্ষম এবং দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য সহায়ক।
উইলিয়াম গেজ জানান, স্বল্পমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দূষণের শিকার নদীগুলোও বিপৎজনক।
বিশ্বের ৭২ টি দেশের নদীগুলোর ৭১১টি অংশ পরীক্ষা করে ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ পেয়েছেন গবেষকরা। এর মধ্যে ১১১টি অংশে অ্যান্টিবায়োটিকের পরিমাণ নিরাপদ মাত্রা অতিক্রম করেছে। সবচেয়ে দূষিত অংশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রা নিরাপদ সীমার ৩০০ গুণের বেশি থাকতে দেখা গেছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের দেশগুলোর নদীতে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দূষণ ঘটেছে। এর মধ্যে আফ্রিকা ও এশিয়ার অংশগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি পরীক্ষা করে নিরাপদ মাত্রার চেয়ে ৩০০ গুণ বেশি মেট্রোনিডাজল পেয়েছেন গবেষকরা। একটি বর্জ্য পানি শোধনাগারের পাশের নদীর অংশের নমুনায় এ দূষণ পাওয়া গেছে।
বর্জ্য অব্যবস্থাপনা ও নদীর পানিতে সরাসরি বর্জ্য ফেলা উচ্চমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক দূষণের একটি কারণ। দাতব্য সংস্থা ওয়াটার এইডের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি বিশ্লেষক হেলেন হ্যামিলটন বলেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি সেবাসংক্রান্ত নিরাপদ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন খুবই জরুরি।
গবেষকরা এখন মাছ, অমেরুদণ্ডী প্রাণী, শৈবালসহ বন্যপ্রাণীর ওপর অ্যান্টিবায়োটিক দূষণের পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের পরিকল্পনা করছেন।