তসলিমা লেখেন, ‘ঝাঁকে ঝাঁকে মুসলিম মৌলবাদি, ফেক বাম, আমাকে না-পড়া লোক, আমার কিছুই না জানা লোক, পঙ্গপালের মতো আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে’
ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলীকে নিয়ে বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের টুইট জন্ম দিয়েছে আলোচনা-সমালোচনার। সে টুইট ডিলিট এবং নতুন করে আবার টুইট দেওয়াসহ এ নিয়ে জল বহুদূর গড়িয়েছে।
এ ঘটনার জের ধরে সমালোচনা নিয়ে এবার তসলিমা ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, সমালোচকরা যেন তার ওপর পঙ্গপালের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে, লাখ লাখ শকুন যেন জীবন্ত তাকে খুবলে খাচ্ছে।
ফেসবুকে তসলিমা লেখেন, “টুইটারে হাজার হাজার এবিউজ বিরোধী সেনা আমাকে এবিউজ করছে, আমার দোষ কেন আমি মইন আলীকে 'এবিউজ' করেছি। এর মানে মইন আলীকে এবিউজ করা ঠিক নয়, আমাকে এবিউজ করা ঠিক। অপমান অসম্মান অত্যাচার জীবনে কম দেখিনি। যত দিন বাঁচি ততদিন দেখতে হবে জানি। ঝাঁকে ঝাঁকে মুসলিম মৌলবাদি, ফেক বাম, আমাকে না-পড়া লোক, আমার কিছুই না জানা লোক, পঙ্গপালের মতো আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, লক্ষ শকুন যেন জীবন্ত আমাকে খুবলে খাচ্ছে।”
“পকেটমার সন্দেহে গরিব নিরীহ ছেলেকে উন্মত্ত জনতা যেমন পিটিয়ে মেরে ফেলে, সেরকম মনে হচ্ছিল আমার, যেন আমি সেই গরিব নিরীহ ছেলেটি। দোষটা কী ছিল আমার? একটি জোক। আযান পড়লে যে মানুষ মাঠেই নিজের জায়নামাজ পেতে নামাজ পড়েন, খেলা চলতে থাকলে নাকি আম্পায়ারকে বলে চলেও যান নামাজ পড়তে, বিজয়ের শ্যাম্পেন খুললে দ্রুত সরে যান দূরে, বিয়ার কোম্পানীর লোগো থাকলে সেই জার্সি পরবেন না বলে জানিয়ে দেন, পয়গম্বরের আদেশ মাফিক গোঁফ ট্রিম করতে থাকেন, দাড়ি বড় করতে থাকেন, কোনও মেয়ে সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিলে মুখের দিকে একটিবারও না তাকিয়ে সাক্ষাৎকার দেন--তাঁকে নিয়ে যদি কৌতুক করিই, তাহলে কি টুইটারের একাউন্ট উড়ে যাবে? হ্যাঁ এমনই থ্রেট এসেছে।”
তসলিমা আরও লেখেন, “আমাকে যারা গতকাল থেকে এবিউজ করছে, তারা তো অনেকেই শার্লি আব্দোকে সমর্থন করে। শার্লি আব্দো তো মস্করা করে বিখ্যাত লোকদের নিয়ে, তাহলে সেটা সমর্থন করে কিভাবে? নাকি ওরা ফরাসি বলে ওদের সমর্থন করা চলে!”
এর আগে মদের বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিতে চেন্নাই সুপার কিংসের কাঠে আবেদন করেন ইংলিশ ক্রিকেটার মঈন আলী। এ ঘটনার পর তাকে উদ্দেশ করে টুইটে করেন তসলিমা নাসরিন। এরপরই পুরো ইংল্যান্ড দলের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
ইংল্যান্ড ক্রিকেটার জফরা আর্চার তার ওই টুইটটি শেয়ার করে লেখেন, “আপনি ঠিক আছেন? আমার তো মনে হচ্ছে না আপনি ঠিক আছেন!”
আরেক সতীর্থ বেন ডাকেট রীতিমত তার টুইটার অনুসারীদের তসলিমার টুইটার অ্যাকাউন্টটি রিপোর্ট করারও আহবান জানান। তিনি বলেন, “এই অ্যাপের এটাই সমস্যা। মানুষজন এসব কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। জঘন্য। এতে পরিবর্তন দরকার। দয়া করে এই অ্যাকাউন্টটাকে রিপোর্ট করুন।”
তসলিমা সেই টুইটে লিখেছিলেন, “মঈন আলি যদি ক্রিকেট না খেলতেন, তাহলে সম্ভবত সিরিয়ায় চলে যেতেন, আইসিসে যোগ দিতে।”
এদিকে, ইংলিশ ক্রিকেটারদের এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আরেকটি টুইট করেন তিনি। সেই টুইটে তিনি বলেন, “ভালোভাবেই তারা জানেন, মঈন আলিকে নিয়ে করা আমার টুইটটা রসিকতা ছিল। কিন্তু তারা এটাকে ইস্যু বানিয়ে আমাকে লজ্জা দিচ্ছে কারণ আমি মুসলিম সমাজকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ শেখাতে চাই আর ইসলামি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেই। মানবজাতির সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি এটাই যে, অতি নারীবাদী বামেরাও নারীবিরোধী ইসলামিস্টদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।”
তবে এরপরও থেমে থাকেননি ইংলিশ ক্রিকেটাররা। আর্চার এ টুইটটাকেও রিটুইট করেছেন। তিনি লেখেন, “এটা রসিকতা! কেউ আপনার রসিকতায় হাসছে না, এমনকি আপনিও হাসছেন না। এখন অন্তত আপনার টুইটটা ডিলিট করা উচিত।”
মতামত দিন