গ্যালারিতে ক্যানভাসজুড়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ। কোথাও পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতন, কোনোটাতে বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত ভাষণ, কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযানের প্রস্তুতির ছবি। রং-তুলির পরিশীলিত আঁচড়ে প্রত্যেকটি চিত্রপটে ঠাঁই পেয়েছে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের অবয়ব। আবার কোনো ক্যানভাসে দুরন্ত শিশুদের প্রাণোচ্ছলতার প্রতিকৃতি। কোনোটাতে গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে থাকা অসাধারণ সৌন্দর্য।
তেলরঙের জমিনে আঁকা ছবিগুলোর প্রতিটি অবয়বে উদ্ভাসিত হয়েছে বাঙালির সংগ্রাম ও বাংলার সৌন্দর্যের ভিন্ন অভিন্ন চিত্র। ছবিগুলোর চিত্রকর ৬৫ বছর বয়সী স্বশিক্ষিত শিল্পী আখতার মাহমুদ কাজল। এমন সব মনোমুগ্ধকর ছবি নিয়ে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ৬ নম্বর গ্যালারিতে “মুক্তিযুদ্ধ ও নৈসর্গিক বাংলাদেশ” শিরোনামে চলছে প্রদর্শনী।
সোমবার (২ মার্চ) জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে ১০ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর সূচনা হয়।
প্রদর্শনীতে শিল্পী আখতার মাহমুদ কাজলের ১০২টি তৈলচিত্র স্থান পেয়েছে।বাঙালির লড়াই সংগ্রামকে কেন্দ্র করে আঁকা প্রতিকৃতি, তাদের মুখাবয়ব ও অভিব্যক্তি, সেই সঙ্গে প্রকৃতি-অনুপ্রাণিত বিমূর্ত ভাব তার চিত্রকর্মকে এনে দিয়েছে স্বতন্ত্র শৈলী। চল্লিশ বছর ধরে শিল্পচর্চা করলেও প্রথমবারের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই মানবতাবাদী শিল্পীর।
জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে আখতার মাহমুদ কাজলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চিত্রপ্রদর্শনী <strong>সৌজন্য</strong>প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌসুলি ও একুশে পদক বিজয়ী ভাষাসৈনিক অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী, একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষাসংগ্রামী গোলাম আরিফ টিপু বলেন, শিল্পী কাজলকে আমি শৈশবকাল থেকেই চিনি। তখনই তার প্রতিভার প্রমাণ পেয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধ কারও কাছে আবেগের, কারও কাছে বড় রকমের চেতনার। সেই আবেগ-চেতনাই ক্যানভাসজুড়ে ফুটে উঠেছে শিল্পী কাজলের তুলির আঁচড়ে।
শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, ৪০ বছর ধরে শিল্পচর্চার পরেও তিনি কখনও প্রদর্শনী করেননি- এটা বিস্ময়কর। তার প্রত্যেকটি শিল্পকর্মে দেশ-মা-মাটির টান স্পষ্ট। তিনি সবসময় বিশৃঙ্খলা, নিষ্ঠুরতা ও হতাশামুক্ত এক পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন। তার শিল্পকর্মের মাধ্যমে শান্তির জন্য আশা এবং আকাঙ্ক্ষা ফুটিয়ে তুলেছেন।
আখতার মাহমুদ কাজল জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫৫ সালে ১ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কমলাকান্তপুর গ্রামে। দারিদ্রের কষাঘাতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ হয়নি এই স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পীর। মূলত তেলরঙের চিত্রকর্মে সিদ্ধহস্ত তিনি।
জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে আখতার মাহমুদ কাজলের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চিত্রপ্রদর্শনী <strong>সৌজন্য</strong> শিল্পী আখতার মাহমুদ কাজল বলেন, শিল্পকর্মে আমার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি স্কুলে পড়ি। বেড়ে উঠেছি গ্রামেই। বাবার পেশাগত কাজের সুবাদে ঘুরেছি দেশজুড়ে। খুব কাছ থেকে দেখেছি পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন। যা আমাকে নাড়া দিয়েছে। বাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যও আমাকে টেনেছে। আমার শিল্পকর্মগুলোতে এসবই তুলে ধরেছি।
৬৫ বছর বয়সী এই চিত্রশিল্পী বলেন, দীর্ঘ চল্লিশ বছর তৈলচিত্রে কাজ করলেও কখনও প্রদর্শনী করিনি। একজন স্বশিক্ষিত শিল্পী হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে শিল্পচর্চা করেছি। তবে আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী এবারই প্রথম।
২ মার্চ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনের ৬ নম্বর গ্যালারিতে দশদিন ব্যাপী প্রদর্শনী চলবে। প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।