বিবর্তনবাদের সূত্র অনুযায়ী, বানরের সঙ্গে মানবজাতির রয়েছে “প্রাচীন” আত্মীয়তা। কেবল হাঁটা-চলার ভঙ্গি আর দুষ্টুবুদ্ধিই নয়, দুটি প্রাণীর অনেক স্বভাবগত মিলও খুঁজে পাওয়া গেছে।
এবার বানরের সঙ্গে মানুষের একটি অদ্ভুত স্বভাবগত মিল খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্সে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় পাকা ফলের প্রতি কিছু বানরের গভীর টানকে অ্যালকোহল বা মদ্যপানের প্রতি মানুষের অনুরাগের সঙ্গে তুলনা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষকরা জানান, পানামায় অ্যাটেলিস জিওফ্রয়ি নামে কালো-হাতের মাকড়সা বানরদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে কাজ করার সময় গবেষকরা দেখতে পান, বানরগুলো নিয়মিত এক ধরনের খেজুর খায়। যার মধ্যে অল্প মাত্রায় অ্যালকোহল (ইথানল) থাকে।
স্পাইডার প্রজাতির দুটি বানরের মূত্রের নমুনা সংগ্রহ করে তাতেও নির্দিষ্ট মাত্রায় ইথানল পাওয়া গেছে। ফলে বোঝা যায়, প্রাণীগুলোর শরীর অ্যালকোহল হজম করছে এবং কিছু শারীরবৃত্তীয় উপায়ে ব্যবহৃতও হচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির নর্থ্রিজের প্রাইমাটোলজিস্ট ক্রিস্টিনা ক্যাম্পবেল বলেন, “প্রথমবারের মতো আমরা নিশ্চিতভাবে দেখতে পাচ্ছি বন্যপ্রাণীরা মানুষের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই ইথানলযুক্ত ফল খাচ্ছে।”
“তবে, এই গবেষণা আরও বিস্তৃত পরিসরে করা গেলে ‘মাতাল বানর’দের সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে,” তিনি বলেন।
২০০০ সালে ইউসি বার্কলে’র জীববিজ্ঞানী রবার্ট ডুডলি প্রথম মাতাল বানরের অনুমানটি করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, “ইথানলের গন্ধ এবং স্বাদের প্রতি বানরদের শক্তিশালী আকর্ষণ আছে। এটি একটি বিবর্তনীয় সুবিধা যা তাদের পাকা, শক্তিবর্ধক ফল বাছাই করতে এবং অন্য প্রাণীদের তুলনায় আগেই ফল সংগ্রহ করতে সহায়তা করে।”
বিজ্ঞানীরা জানান, ইথানলের জন্য এই একই আগ্রহ মানুষের মধ্যেও বিদ্যমান।
গবেষকদের পাওয়া তথ্যটি এখন পর্যন্ত অনুমান-নির্ভর হলেও তারা আরও অনেক প্রাণীকে ইথানলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে দেখেছেন। যেমন- প্যান ট্রোগ্লোডাইটস নামে এক ধরনের বন্য শিম্পাঞ্জিকে পাম গাছ থেকে গাঁজনযুক্ত রস খেতে দেখা গেছে এবং এই রসে প্রায় ৭% ইথানল পাওয়া গেছে।
গবেষকরা বলেন, “আমরা যত বেশি গাঁজনযুক্ত ফল খাই, তত বেশি শক্তি অর্জন করি এবং মাতালও হতে পারি। এই বানরগুলোও ক্যালোরি বা শক্তি লাভের জন্যই পাকা ফল খাচ্ছে।”
“বানরগুলো সম্ভবত মাতাল হচ্ছে না, কারণ তারা মদ্যপানের মাত্রায় পৌঁছানোর আগেই শক্তি পেয়ে যাচ্ছে। তবে, বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন,” রবার্ট ডুডলি ব্যাখ্যা করেন।