মৃত্যু অনিবার্য হলেও অল্প বয়সে বা দীর্ঘ রোগ ভোগের পর মৃত্যু কেউ চায় না। তাই সুস্থ শরীরের দীর্ঘদিন বাঁচার উপায় খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা।চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির কারণে সারাবিশ্বে প্রতি বছর অনেকের আয়ুই শত বছর ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু শতায়ু হওয়া মানেই কী সুদীর্ঘ সুস্থ জীবন? তা একেবারেই নয়। কারণ শতায়ুদের অনেকেরই শেষ জীবন কাটে আলঝেইমার, আর্থরাইটিস, ডিমেনশিয়ার মতো রোগে ভোগে।
তাই শতায়ু হতে অনেকেরই তীব্র আপত্তি। বার্লিনের ডাটা সায়েন্টিস্ট শেখর বিশ্বাস তাদের একজন। তার মতে, শত বছর বেঁচে থাকা খুব বিরক্তিকর, কারণ, ততদিনে জগতে নিজের যা কিছু ভালো লাগে তার প্রায় সব কিছুই দেখা, জানা হয়ে যায়। তাহলে কেমন জীবন চান শেখর? এ প্রশ্নে খুব সহজ উত্তর তার। তিনি চান মোটামুটি এমন এক দীর্ঘ জীবন, যার শেষ বছরগুলো মোটেই রোগযন্ত্রণায় কাতর হয়ে শুয়ে শুয়ে কাটাতে হবে না।
নিউইয়র্কের আলবার্ট আইনস্টাইন কলেজ অব মেডিসিনে ইন্সটিটিউট অব এজিং রিসার্চ বিভাগের প্রধান ড. নীর বারসিলাই দীর্ঘ জীবন পাওয়া মানুষদের নিয়ে কাজ করেন। তবে সব দীর্ঘজীবী নয়, তার কাজ শুধু শতায়ুদের নিয়ে। আপাতত ৭৫০জন শতায়ুকে নিয়ে কাজ করে মানুষের সুস্থ দীর্ঘ জীবন যাপনের উপায় খুঁজছেন বারসিলাই্। তার গবেষণার যাবতীয় অর্থের জোগান আসছে ২৬ বছর বয়সি বিটকয়েন মিলিয়নিয়ার জেমস ফিকেলের কাছ থেকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের শতকরা অন্তত ৫০ ভাগ বয়স্ক মানুষের মৃত্যু হয় আলঝেইমার, হৃদরোগ, ক্যান্সার, টাইপ টু ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে। এসব রোগের কারণে দীর্ঘজীবীদের অনেকেরই শেষ কয়েকটি বছর কাটে দুর্বিষহ কষ্টে।
মায়ো ক্লিনিকের মেডিসিনের অধ্যাপক জেমস কার্কল্যান্ড এসব রোগকে নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের জীবনের অন্তিম দিনগুলোকে যন্ত্রণা্মুক্ত করার চেষ্টা করছেন।
তিনি চান এমন মৃত্যু নিশ্চিত করতে, যাতে মনে হবে পাঁচ কিলোমিটার দৌড়ে বাড়ি ফেরার পর বুঝি কেউ সিন্ধান্ত নিয়েছে, “ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে, কাল সকালে আমি আর ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠবো না।”
গত প্রায় ২০ বছর ধরে শতায়ুদের নিয়ে কাজ করছেন ড. নীর বারসিলাই। এই দুই দশকের অভিজ্ঞতায় তিনি জেনেছেন, শতায়ু যে শুধু অধুমপায়ীরাই হন, তা ঠিক নয়। এমনকি সারাজীবন নিরামিষ খেয়েছেন যারা, তাদেরও অতি নগণ্য অংশই শতায়ু হয়েছেন৷
তিনি জানান, তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ পুরুষই ধুমপায়ী, ৫০ ভাগেরও বেশি মানুষ কখনও তেমন ব্যায়াম বা খেলাধুলা না করায় তাদের দেহ ভীষণ মেদবহুল। আর তাদের শতকরা মাত্র দুই ভাগ মানুষ নিরামিষভোজী।
এদিকে, বার্ধক্যজনিত রোগ এবং সেসব রোগের প্রভাব দূর রাখতে ইতোমধ্যে মেট্রোমরফিন নামের একটা ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছেন ড. বারসিলাই।
এছাড়া, অকাল মৃত্যু বা শেষ জীবনের কষ্ট লাঘব করার আরও কিছু চেষ্টা চলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সাফল্য আসতে অবশ্য এখনও অনেক বাকি।