সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বলিউডের খ্যাতিমান গায়ক কেকে’র আকস্মিক মৃত্যু কোটি ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়েছে। মাত্র ৫৪ বছর বয়সী এই তারকা কলকাতার নজরুল মঞ্চে লাইভ পারফরমেন্সের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই মারা যান।
আপনার জীবনযাত্রা, বয়স, পারিবারিক অসুখের ইতিহাসের পাশাপাশি পরিবেশগত বিভিন্ন কারণ যেমন- দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিভিন্ন কারণেও হৃদরোগ হতে পারে।
তবে জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন এবং অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ত্যাগ করে এই ঝুঁকি কমানো সক্ষম সম্ভব। তাই দেরি না করে দৈনন্দিন রুটিনে ব্যায়াম করা বা কাজে সক্রিয় থাকার মতো স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো যুক্ত করা উচিত।
স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো যা বলছে
ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন বলছে, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার ফলে হৃদরোগ এবং ধমনীসংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি ৩৫% কমে যেতে পারে। অন্যদিকে, শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় বা বসে থাকার ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো হৃদরোগ এবং রক্ত সঞ্চালনের বিভিন্ন রোগ হতে পারে।
নিউ ইয়র্কের স্বাস্থ্য বিভাগের মতে, হৃদরোগে আক্রান্ত প্রায় ৩৫% মানুষের মৃত্যু হয় শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মার্কিন নাগরিকদের প্রায় ৬০% শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয়। করোনারি হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ মারা যায়।
এটিও লক্ষণীয় যে, পর্যাপ্তভাবে সক্রিয়দের তুলনায় যারা নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের মৃত্যুর ঝুঁকি ২০% থেকে ৩০% বেড়ে যায়।
এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সর্বশেষ অনুমান বলছে, প্রতি সপ্তাহে ৫৫ বা তার বেশি ঘণ্টা কাজ করলে স্ট্রোকের আনুমানিক ঝুঁকি ৩৫% বেড়ে যায়।
কীভাবে নিয়মিত ব্যায়াম হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
হৃৎপিণ্ড এক ধরনের পেশী এবং অন্যান্য পেশীর মতোই ব্যায়ামের মাধ্যমে এটি উপকৃত হয়। শক্তিশালী হৃৎপিণ্ড কম পরিশ্রমে সারা শরীরে ভালোভাবে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম হৃদপিণ্ড এবং রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ করে তোলে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং আপনার রক্তচাপকে সুস্থ-স্বাভাবিক রাখে।
কত সময় ব্যায়াম করা যাবে
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা উচিত। এটি হৃদস্পন্দন বাড়ায় এবং দ্রুত শ্বাস নিতে বা শরীর উষ্ণ রাখতে সহায়তা করে। দ্রুত হাঁটা বা সাইকেল চালানোর মাধ্যমেও ব্যায়াম করা যায়। এছাড়াও, হাতে অল্প ওজনের কিছু ওঠানো-নামানো, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা, বাগান করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমেও সক্রিয় থাকা যায়।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর অন্যান্য উপায়
রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর মতো করোনারি হার্ট ডিজিজ (সিএইচডি) হওয়ার ঝুঁকি কমানোরও কয়েকটি উপায় রয়েছে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের সিএইচডি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ধূমপান এথেরোস্ক্লেরোসিস (ধমনিতে ফুসকুড়ি) হওয়ার জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ। এছাড়াও এটি ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে করোনারি থ্রম্বোসিসের কারণ। ধূমপান ছেড়ে দিলে সিএইচডির ঝুঁকি কমে যাবে।
যারা মদ্যপান করেন, তাদের সপ্তাহে ১৪ ইউনিটের বেশি পান করা উচিত নয়। মদ্যপান এড়ানো উচিত, কারণ এটি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ভাষান্তর: আফসানা ইয়াসমিন মোনালিসা