শরীরের বাড়তি ওজন ঝরানোটা মোটেও সহজ কথা নয়। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে যেমন ধৈর্য্যশীল থাকতে হয়, তেমনি অনেক কিছুতে ছাড় দেওয়ার মানসিকতাও থাকতে হয়। বাড়তি ওজন ঝরানোর ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকা থেকে যেমন প্রচুর মুখরোচক খাবার বাদ দিতে হয়, তেমনি অনেক সুপেয় পানীয় যেমন জুস, কোমল পানীয়, অ্যালকোহলও বাতিলের খাতায় রাখতে হয়।
অ্যালকোহল, জুস আর কোমল পানীয় নিয়মিত পান করেও ওজন ঝরানো সম্ভব নাকি, সেটা নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের উত্তর হলো- না। তাদের ভাষ্যমতে, শুধু ওজন কমানোর ক্ষেত্রেই বাধা দেয় তা না, বরং নিয়মিত এসব পানীয় পান করার অভ্যাস থাকলে তা শরীরের ওপর বাজে প্রভাব ফেলতে পারে।

বসন্ত কুঞ্জের ফোর্টিস হাসপাতালের প্রধান ডায়েটিশিয়ান ড. রুচিকা জৈন বলেন, “ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কাউকে অ্যালকোহল, জুস আর কোমল পানীয় পান করার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয় না। মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, কিডনির জন্য এসব পানীয় মোটেও উপকারী না। উপরন্তু অতিমাত্রায় অ্যালকোহল সেবনে যেমন যকৃতের ক্ষতি হয় এবং পেটের স্থুলতার ঝুঁকিও বাড়তে পারে।”

একই কথা ড. রচনা আগরওয়ালেরও। তিনি বলেন, “অ্যালকোহল, জুস আর কোমল পানীয়ে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। এসব পানীয় পান করলে সেগুলো সরাসরি রক্তে মিশে যায়। এর ফলে আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। আর ওজন ঝরানোর ক্ষেত্রে বাড়তি ইনসুলিন অন্যতম বড় প্রতিবন্ধকতা। এছাড়া, এতে হজমে ব্যাঘাত ঘটার সঙ্গে সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক কার্যকারিতাও ব্যাহত হতে পারে।”
ফাইল ছবি মেহেদি হাসান/ঢাকা ট্রিবিউন
এসব পানীয়ের পরিবর্তে বরং বিশেষজ্ঞরা বরং সবাইকে বিভিন্ন ফল খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করে থাকেন। এ বিষয়ে ড. রুচিকা জৈন বলেন, “ফলে ফাইবার নেই। পক্ষান্তরে, জুসের প্রধান উপাদানই চিনি। এক গ্লাস জুস হয়ত খাওয়া জায়, তবে সেক্ষেত্রে বাজারের জুস পরিহার করাই শ্রেয়।” অন্যদিকে, ড. রচনা আগরওয়াল বলেন, “জুসের পরিবর্তে ফল খান।”

কোমল পানীয়ের প্রসঙ্গে ড. রুচিকা জৈন বলেন, “কোমল চিনি এবং কার্বন ডাই অক্সাইড থাকে, যা এসিডিটি প্রবণ ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকারক। এমনকি শূন্য ক্যালোরিযুক্ত পানীয়তেও কৃত্রিম চিনি রয়েছে।”
যদিও অনেকেই ভেবে থাকেন, মিষ্টি জাতীয় খাবার আর পানীয় সেবনের পরেও তাদের শরীরে তেমন ক্যালরি প্রবেশ করেনি। কিন্তু তাদের ধারণাকে ভুল উল্লেখ করে ড. রচনা আগরওয়াল বলেন, “বিষয়টি শুধু ক্যালরির না, আমাদের শরীরে কী ধরনের ক্যালরি প্রবেশ করেছে সেটিও এখানে বিবেচ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ।”
বিশেষজ্ঞ জানান, ওজন ঝরানোর কথা মাথায় থাকলে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ায়- এমন খাবার এবং পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত। এ ব্যাপারে ড. রুচিকা জৈন বলেন, “অ্যালকোহল, জুস আর কোমল পানীয়ের পরিবর্তে কেউ বাটারমিল্ক এবং তাজা লেবুর শরবত পান করতে পারেন।”