যকৃতে চর্বির পরিমাণ বেড়ে গেলে এর স্বাভাবিক গঠনের যে বিপর্যয় ঘটে, তাকে ফ্যাটি লিভার বলে। যকৃতে তার নিজস্ব ওজনের ৫-১০% চর্বি জমলে এমনটা ঘটে থাকে। ফ্যাটি লিভারের প্রধান ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে স্থূলতা, টাইপ টু ডায়াবেটিস এবং মাত্রাতিরিতক্ত অ্যালকোহল সেবন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভার তেমন কোনো ক্ষতি না করলেও যকৃতে প্রদাহ অব্যাহত থাকলে একপর্যায়ে লিভার সিরোসিস হতে পারে। তখন যকৃত আর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু ক্রমান্বয়ে সুস্থ লিভারের টিস্যুর জায়গা নেওয়া শুরু করে, যা আর থামানো সম্ভব না।
অনিয়মিত জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত ওজনের কারণে অনেকেই ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হন। যকৃতের স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা বন্ধ হয়ে গেলে পেট, ঘাড় এবং কাঁধে ব্যথা অনুভব হতে পারে। যকৃতের অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথার মাত্রাও বাড়তে পারে। ভুক্তভোগী অধিকাংশ রোগীর ভাষ্যমতে, এ ব্যথা অসহ্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী।
লিভার সিরোসিস কিংবা সিরোসিস; যেকোনো কারণেই এ ব্যথা হতে পারে। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত অধিকাংশ লোকই তাদের পেটের ওপরের ডানদিকে, পাঁজরের নীচে এ ব্যথা অনুভব করে। অন্যদিকে সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীরা পিঠ এবং গ্রন্থিতেও ব্যথা অনুভব করতে পারে।
স্বাস্থ্য সংস্থা ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের তথ্য অনুযায়ী, ফাঁপা যকৃতের কারণে ডান কাঁধে ব্যথা হতে পারে। যকৃত ফুলে গেলে স্নায়ুগুলো উদ্দীপ্ত হয়ে কাঁধের স্নায়ুর সঙ্গে সংযুক্ত হয়, যাকে রেফার্ড পেইন বলা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে ক্যান্সার রিসার্চ ইউকের এক কেস রিপোর্টে লিভারের চিকিৎসক বলেন, “যকৃতের সমস্যায় ভোগা হানা নামের এক রোগী তার ডান কব্জিতে ব্যথা অনুভব করেন। প্রথমে তিনি ধারণা করেছিলেন, কম্পিউটারের মাধ্যমে করা সব কাজের কারণেই এ ব্যথা অনুভব হচ্ছে। কিন্তু পরবর্তীতে দুই হাতের কব্জিই ফুলে উঠলে তিনি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।”
ফ্যাটি লিভার রোগের লক্ষণগুলো পাঁচ বছরের মধ্যে দেখা দিতে পারে। তবে শনাক্ত হওয়ার পর ২০ থেকে ৩০ বছরের মত সময়ও লাগতে পারে। ওপরে উল্লেখিত লক্ষণগুলোর দেখা দিলে প্রাথমিক অবস্থায় ফ্যাটি লিভার রোগ শনাক্ত করা সম্ভব।
ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্ত থাকতে নিয়মিত যকৃতের অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত। স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা অনুসরণ, শরীরচর্চা, ওজন নিয়ন্ত্রণ, অ্যালকোহল বর্জনের মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া, সপ্তাহের অধিকাংশ দিন ন্যুনতম ৩০ মিনিট ব্যায়ামের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।