তাসমানিয়া বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণী “থাইলাসাইন”। প্রাণীটির পিঠে সাদা ডোরাকাটা দাগের কারণে এটিকে তাসমানিয়ান বাঘ হিসিবে বিবেচনা করা হয়। এটি আসলে মারসুপিয়াল বা এক ধরনের অস্ট্রেলিয়ান স্তন্যপায়ী গোত্রের প্রাণী যারা নিজেদের থলিতে করে বাচ্চা লালন-পালন করে।
শত বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই বাঘকে প্রাণীজগতে ফিরিয়ে আনতে গবেষণা করছেন অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষকরা। এই গবেষণা প্রকল্পটি মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান “কলোসাল”রযৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, ত্রিশের দশকে শেষ তাসমানিয়ান বাঘটি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। এই গবেষণার পেছনে লাখ লাখ ডলার খরচ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের বিজ্ঞানীরা একই ডিএনএ বিশিষ্ট মারসুপিয়াল প্রজাতির জীবিত কোনো প্রাণী থেকে স্টেম সেল নিয়ে, জিন-সম্পাদনা প্রযুক্তির মাধ্যমে এই বিলুপ্ত প্রাণীটিকে ফিরিয়ে আনা বা এর খুব কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের প্রাণীকে প্রাণীজগতে ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছেন।
তবে, তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। সমালোচনাকারীরা মনে করেন, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীর “পুনরুত্থান” স্রেফ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতেই সম্ভব, বাস্তবে নয়।
তাসমানিয়ান বাঘ নিয়ে এ গবেষণাটি পরিচালনা করছেন মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যান্ড্রু পাস্ক। তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস, আগামী দশ বছরের মধ্যেই আমরা আমাদের প্রথম থাইলাসাইন-শাবক আনতে পারবো।”
হাজার হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় মানবসভ্যতা পা রাখার পর তাসমানিয়ান বাঘের সংখ্যা হ্রাস পায়। এরপর ডিঙ্গো (এক প্রজাতির অস্ট্রেলিয়ান কুকুর) কুকুরের আগমনের পর তাদের সংখ্যা আবারও হ্রাস পায়। তারপর একসময় শুধু তাসমানিয়ার দ্বীপে এগুলোর দেখা মিলতো এবং অবশেষে বিলুপ্তই হয়ে যায়। ১৯৩৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার হবার্ট চিড়িয়াখানায় সর্বশেষ বন্দী তাসমানিয়ান বাঘটির মৃত্যু হয়।
কিন্তু এই প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহের মেঘ কাটছে না বিশেষজ্ঞদের মন থেকে। অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর অ্যানশেন্ট ডিএনএ”র সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি অস্টিন বলেন, “পুনরুত্থান তো একটা কল্পকাহিনীর মতো ব্যাপার। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের চাইতে বরং গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের দিকেই তাদের (প্রকল্পের) মনোযোগ বেশি।”
তবে তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় গত ২০ বছর ধরেই চলছে। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এই প্রাণীটির ক্লোনিং করার কথা ভেবেছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে নমুনা থেকে ডিএনএ নেওয়া বা পুনর্গঠনের চেষ্টাও করা হয়েছে।