মৃত্যুর বিভিন্ন কারণগুলোর মধ্যে স্ট্রোক অন্যতম। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে মৃত্যু ও পক্ষাঘাত হওয়ার অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছে স্ট্রোক।
অনেকের ধারণা, স্ট্রোক বয়স্কদের রোগ। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, কমবয়সীদের মধ্যেও বেড়েছে স্ট্রোকের সংখ্যা। গত কয়েক বছরে বিশ্বজুড়ে তরুণদের মধ্যে স্ট্রোকের অনুপাত ১৫-৩০% পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
বয়স ৪০-এর আশপাশে, এমনকি ৩০-এর কোটায় দাঁড়িয়ে আছেন; এমন অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্ট্রোক কারো জীবনটাই কেড়ে নিচ্ছে, কারো কারো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিকল করে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্তিষ্কে ঠিকমতো অক্সিজ়েন পৌঁছতে না পারলে স্ট্রোক হয়। মস্তিষ্কের সেরিব্রাম অংশে রক্তক্ষরণ হলে কিংবা রক্তবাহের মধ্যে ফ্যাট জমে থাকার কারণে যদি মস্তিষ্কে ঠিকমতো অক্সিজ়েন পৌঁছতে পারে না, তখনই স্ট্রোক হয়।
স্ট্রোক সাধারণত দু’ধরনের হয়। ইসকিমিক আর হেমারেজিক। ইসকিমিক স্ট্রোকে রক্ত চলাচল থেমে যায়। আর হেমারেজিক স্ট্রোকে দুর্বল রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
এ বিষয়ে ভারতীয় চিকিৎসক শুভম সাহা দেশটির আনন্দবাজার পত্রিকাকে বলেন, “রক্তচাপ বেশি আছে, এমন রোগীদের এ বিষয়ে একটু বেশি সচেতন থাকতে হবে। দীর্ দিন ধরে রক্তচাপে আক্রান্ত জেনেও চিকিৎসা না করানো, ঠি মতো ওষুধ না খাওয়া, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা না করানো এই সব অভ্যাস কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।”
উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি যাদের
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস স্ট্রোকের ঝুঁকি ৮০% কমাতে পারে । অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও স্নেহপদার্থ যুক্ত খাবার স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ। তাই স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে “জাঙ্ক ফুড”, অতিরিক্ত মশলাদার ও খুব তেল দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত হতে হবে।
শরীরচর্চার অভাব ও সারাদিন শুয়ে-বসে থাকার অভ্যাসও বাড়িয়ে দেয় স্ট্রোকের ঝুঁকি। এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ, শরীরচর্চা না করা ওবেসিটির সমস্যার অন্যতম কারণ। ওবেসিটি থেকেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাসও কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই এই সুস্থ থাকতে বাদ দিতে হবে ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস ।
এছাড়া পরিবারের কারো উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে কিংবা স্ট্রোক হওয়ার ইতিহাস থাকলেও কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সব মিলিয়ে স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে কিন্তু জীবনযাত্রায় বদল আনতেই হবে। একটু সতর্ক হলেই এই রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে ফেলা সম্ভব।