যেকোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারষ্পারিক শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, বিশ্বাস এবং আস্থা ভীষণ প্রয়োজন। এর কোনোটি নড়বড়ে হলেই সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। আর টানাপড়েনের মাঝে জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে সমস্যা আরও বাড়ে।
তবে আধুনিক বিশ্বে অনেকেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনে টানাপড়েনের সময় সম্পর্ক থেকে একটা ব্রেক বা বিরতি নিতে চান। আর সম্পর্কে এই ধরনের বিরতি নেওয়ার অর্থ কিন্তু সম্পর্কের ইতি টানা নয়।
প্রেম কিংবা দাম্পত্য, যেকোনো সম্পর্কে দুটো মানুষের একটু আধটু ঝগড়া-অশান্তি লাগতেই পারে।আর কথায় তো আছেই যে, ভালোবাসার মানুষটারও ওপর অভিমানটাও বেশি হয়।
অনেকক্ষেত্রেই প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ দুটো মানুষকে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। দু’জনেই চান একে অপরের সঙ্গে থাকতে। তবু কোথায় যেন কাজ করে অস্বস্তি, কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি। সম্পর্ক পৌঁছে যায় প্রায় ভেঙে যাওয়ার পর্যায়ে। তবু সব ঠিক করে নিতে চাইছেন দু’জনেই। কিন্তু জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গিয়ে সমস্যা আরও বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেইৎ সম্পর্ক থেকে একটা বিরতি নিতে চান।
সেই বিরতি কয়েক দিনের হতে পারে, আবার কয়েক মাসেরও হতে পারে। এ সময়ে একে অপরের থেকে দূরে থাকার পরই তারা সম্পর্ক নিয়ে স্থায়ী সিদ্ধান্তে আসেন। এক্ষেত্রে ফলাফল ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক দুই-ই হতে পারে।
যখন বিরতি নেবেন
যদি মনে করেন কোনোসম্পর্কে থাকতে থাকতে আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন, তখন কিছু দিনের জন্য সম্পর্ক থেকে বিরতি নিতে পারেন। অথবা অনেক সময় জীবনে একসঙ্গে প্রচুর ব্যস্ততা এসে পড়ে, তখন যদি সঙ্গীর উপস্থিতি কোনো প্রতিবন্ধকতা নিয়ে আসে তা হলেও বিরতি নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন। যদি দেখেন সম্পর্কে ঝগড়া-অশান্তির মাত্রা অনেকটাই বেড়ে গেছে, একে অপরকে বুঝিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না অথচ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে মন থেকে সায় পাচ্ছেন না, তখন সম্পর্ক নিয়ে ভাবার জন্যও একান্তে কয়েক দিন সময় কাটানোর প্রয়োজন রয়েছে। এতে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে। অনেক সময় দু’জনে কথা বলে, আলোচনা করে যে সমস্যা সমাধান করা যায় না, একে অপরের থেকে দূরে থেকে সে সমস্যা সমাধান করা সহজ হয়।
বিরতি নেওয়া মানে ব্রেক আপ নয়
সম্পর্কে বিরতি নিয়ে অনেক ক্ষেত্রে ব্রেক আপের সূচনা করলেও তা কখনওই চূড়ান্ত ব্রেক আপ নয়। সম্পর্ক যদি শেষ অবস্থায় পৌঁছে গিয়ে থাকে তা হলে এক দিন না এক দিন বিচ্ছেদ অনিবার্য। সম্পর্কে থেকে অনেক সময় বিচ্ছেদ এড়ানোর পথ খুঁজে পাওয়া যায় না আর অনেক সময় দূরে থেকে একে অপরের কাছে আসার রাস্তা বেরিয়ে আসে। খারাপ হতে থাকা সম্পর্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে এটা শেষ পথ হিসেবে দেখতে পারেন। একে অপরের নম্বর ডিলিট করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এই সময়ে একে অপরের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ না রাখাই ভালো।
বিরতির সময় অন্য কোনো সম্পর্কে না জড়ানো
সম্পর্কে বিরতি নিয়ে নিজেকে সময় দেওয়া প্রয়োজন। যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এই সময়ে অন্য কোনো সম্পর্কে না জড়ানোই ভালো। আর যদি তৃতীয় ব্যক্তির সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ব্রেক নিয়ে থাকেন তবে তা অবশ্যই এক ধরনের প্রতারণা। একজনের সঙ্গে সম্পর্ক অবসানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর পরেই কেবল অন্য কোনো সম্পর্কে জড়ানো উচিত। অবসানের
সর্বোচ্চ কত দিনের বিরতি নেওয়া যেতে পারে
এক্ষেত্রে পুরোটাই নির্ভর করছে সমস্যা, এবং আপনারা দু’জন সেটাকে কীভাবে দেখছেন তার ওপর। তবে যদি খুব বেশি দিনের জন্য বিরতি নিলে সম্পর্ক টেকার সম্ভাবনা কম। কোনো নির্ধারিত সময়সীমা নেই। যদি দেখেন বিরতি নিয়ে দু’জনে বেশ ভালোই আছেন, শান্তিতে আছেন, সঙ্গীরও একই অবস্থা তা হলে বুঝতে হবে আপনার সম্পর্ক শেষ অবস্থায় পৌঁছে গেছে। বিরতি নিলে নিজের অনুভূতিগুলো বোঝা সহজ হয়ে যাবে।
বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুলও হতে পারে
সম্পর্ক থেকে বিরতি নেওয়ার কিন্তু কিছু ঝুঁকি থাকে। এই পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অবশ্যই খুব ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। এই কাজে দু’জনেরই সম্মতি থাকা প্রয়োজন। নাহলে আপনার সঙ্গী এতে ভেবে নিতে পারেন আপনি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন। মনে রাখবেন, সম্পর্ক থেকে বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্ক বাঁচানোর শেষ পদক্ষেপ হওয়া উচিত।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা