সম্প্রতি বেলজিয়ামের চল্লিশোর্ধ একজন ব্যক্তি মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে সংবাদের শিরোনাম হন। প্রাথমিক পরীক্ষায় তার শরীরে নির্ধারিত সীমার চেয়ে তিনগুণ অ্যালকোহলের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তবে, ওই ব্যক্তি দাবি করেন যে তিনি এক ফোঁটা অ্যালকোহলও গ্রহণ করেননি।
শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় প্রমাণিত হয় যে, তিনি মদ্যপান করেননি। এরপর মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগ থেকে খালাস পান তিনি।
এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন তার শরীরে অ্যালকোহলের উপিস্থিতি পাওয়া গেল আর কেনই বা তিনি মাতালের মতো আচরণ করছিলেন?
চিকিৎসকরা বলছেন, ওই ব্যক্তি মূলত অটো-ব্রিউয়ারি সিন্ড্রোম (এবিএস) নামের একটি অত্যন্ত বিরল রোগে আক্রান্ত।
এই রোগের ফলে ব্যক্তির শরীর নিজ থেকেই অ্যালকোহল তৈরি করতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির অন্ত্রে থাকা কার্বোহাইড্রেট গাঁজনের মধ্য দিয়ে ইথানলে পরিণত হয়ে কার্যকরভাবে শরীরের ভেতরে অ্যালকোহল তৈরি করে।
বেলজিয়ান হাসপাতাল এজেড সিন্ট-লুকাসের ক্লিনিক্যাল বায়োলজিস্ট লিসা ফ্লোরিন জানান, এবিএস আক্রান্ত ব্যক্তিরা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের মতো একই ধরনের অ্যালকোহল তৈরি করে।
তিনি জানান, একজন ব্যক্তি এবিএস নিয়ে জন্মগ্রহণ না করলেও তার শরীরে এটির বিকাশ ঘটতে পারে যখন তাদের ইতোমধ্যেই অন্ত্র-সম্পর্কিত অন্য কোন রোগ থাকে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা অ্যালকোহলের নেশার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ লক্ষণ অনুভব করতে পারেন।
এবিএসকে গাট ফারমেন্টেশন সিনড্রোমও বলা হয়। এটি দেহের এক রহস্যময় অবস্থা যা রক্তে অ্যালকোহলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রোগী অল্প অ্যালকোহল গ্রহণ করুক কিংবা একেবারেই না গ্রহণ করুক, নেশাগ্রস্ত আচরণ করে।
এই প্রক্রিয়ায় মুখ, পাকস্থলী বা মূত্রনালীর ব্যাকটেরিয়াগুলো চিনি ও অন্যান্য শর্করা গ্রহণ করে সেগুলোকে অ্যালকোহলে রূপান্তরিত করে। প্রক্রিয়াটি এন্ডোজেনাস অ্যালকোহল প্রোডাকশন নামেও পরিচিত।
এবিএসের প্রতিক্রিয়ায় কথা জড়িয়ে আসে, হাঁটাচলা এলোমেলো হয়ে যায় এবং হ্যাংওভার (অস্বস্তিকর অনুভূতি) হয়।
বিবিসি বলছে, রোগটির অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথম জানা যায় ১৯৪০ এর দশকে যখন ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে উগান্ডার এক হাসপাতালের চিকিৎসকদের করা একটি ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
সে সময় মাত্র পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলে শিশুর পাকস্থলী ফেটে গিয়েছিল। পরিপাকতন্ত্রে সার্জারির সময় “একটা তীব্র গন্ধ পাওয়া যায়...যা স্পষ্টতই অ্যালকোহলিক বা মাদকসম্পৃক্ত” বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালে আমেরিকান জার্নাল অফ গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিতে প্রকাশিত এক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে এমন উদাহরণ একশোটিরও কম। যদিও, কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, অনেক ঘটনাই আড়ালে রয়ে গেছে। রোগটির কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত নন চিকিৎসকরা।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি (স্থূলতা) বা অন্ত্রের প্রদাহের মতো রোগের উপস্থিতি আছে এমন ব্যক্তিদের এবিএসে আক্রান্তের ঘটনা বেশি ঘটেছে।
এছাড়া, রোগীরা কী ধরনের ওষুধ গ্রহণ করেন তার সঙ্গেও এটি সম্পর্কিত বলে জানা গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এমন ওষুধ গ্রহণ করা, যেগুলো আমাদের পেটে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও অনুজীবগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।