বয়ঃসন্ধিকালে অথবা বয়ঃসন্ধি পার হওয়ার সময় বিষণ্ণতা গ্রাস করছে কিশোর-কিশোরীদের। মেডিকেল জার্নাল “দ্য ল্যানসেট” এর এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
যে কোনো পরিস্থিতিতেই অতিরিক্ত উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় ভুগছে এখনকার প্রজন্ম। বিনা কারণে দুশ্চিন্তা জন্ম দিচ্ছে অজানা ভয়ের। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের “মারডক চিলড্রেনস রিসার্চ ইনস্টিটিউট” দীর্ঘ দিন ধরেই ১৫-২৪ বছর বয়সিদের নিয়ে সমীক্ষা চালায়। তারা দাবি করেছে, বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীদের অন্তত ৭৫% বিষণ্ণতার শিকার। এই সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে “দ্য ল্যানসেট” মেডিকেল জার্নালে।
গবেষক এলি রবসন জানিয়েছেন, ১,২৩৯ জন কিশোর ও কিশোরীকে নিয়ে সমীক্ষাটি করা হয়। দেখা গেছে, বয়ঃসন্ধির পর্বে এসে অতিরিক্ত উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায় ভুগছে ছেলেমেয়েরা। এর কারণ অনেক। পড়াশোনা, পরীক্ষার চাপ তো আছেই, পাশাপাশি সামাজিকমাধ্যমের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা, প্রত্যাশা পূরণ না-হওয়া, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, পারিবারিক নানা বিষয়, শারীরিক পীড়ন ইত্যাদি।
সমীক্ষায় আরও জানা গেছে, বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েরা, ছেলেদের চেয়ে বেশি বিষণ্ণতায় ভুগছে। এর কারণ যে শুধু ব্যক্তিগত জীবনের ঝড়ঝাপটা, তা নয়। শরীরের ভেতরেও এমন অনেক সমস্যা ঘটে, যেগুলোর কারণে বিষণ্ণতায় ভুগছে তারা। কিশোরীদের মধ্যে “মুড ডিজঅর্ডার”-এর সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। মন খারাপ জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে তাকে চিকিৎসার পরিভাষায় “ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার” বলা হয়। এমন সমস্যাও দেখা যাচ্ছে কিশোরীদের মধ্যে।
ভারতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের রিপোর্ট বলছে, এ দেশে কমবয়সিদের মধ্যে ৩১-৬৮% বিষণ্ণতার শিকার। সমীক্ষা জানাচ্ছে, ভারতে কিশোর এবং সদ্য তরুণদের মানসিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার প্রবণতা তুলনামূলক কম। মানসিক সমস্যাকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। অন্যদিকে, মানসিক সঙ্কট নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করার বদলে তা নিজেদের মধ্যে চেপে রাখার ঝোঁকও বেশি। ফলে সমস্যা বেড়েই চলেছে।
মনোবিদেরা বলছেন, বিষয়টি যদি সাময়িক হয়, তা হলে তা নিজে থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যদি দীর্ঘদিন চলতে থাকে, তখন কাউন্সেলিং করাতে হবে। ডিপ ব্রিদিং বা কিছু ব্যায়ামে উপকার পাওয়া যায়। সন্তান যদি অতিরিক্ত উদ্বেগে ভোগে, তা হলে মা-বাবাকে ধৈর্য ধরে বোঝাতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতিতেই মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। বাড়িতে যদি তেমন পরিবেশ থাকে, মা-বাবাও উৎকণ্ঠায় ভোগেন, তা হলে সমস্যা আরও বাড়বে।