ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়ে বিএনপি’র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে ৩ লাখ ভোটে হারিয়েছেন তিনি
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে জিতে মেয়র হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী। ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়ে বিএনপি’র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে ৩ লাখ ভোটে হারিয়েছেন তিনি।
উত্তেজনা, সহিংসতা, প্রাণহানি আর অনিয়মের নানা অভিযোগের পাশাপাশি ভোটারদের কম উপস্থিতির মধ্যে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে গভীর রাতে ফল ঘোষণা করা হয়।
সম্পূর্ণ ভোটগ্রহণ ইভিএমে হলেও এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে ফল ঘোষণা কেন্দ্র থেকে প্রায় ১০ ঘণ্টা পর চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন এই নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান।
তিনি জানান, নৌকার প্রার্থী রেজাউল পেয়েছেন ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।
মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৩৩টির ফল ঘোষণা হয়। দু’টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত হয়েছে। তবে সেসব কেন্দ্রের ভোট ফলে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে রেজাউলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন হলেও ভোট দিয়েছেন মোট ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৫৪৩। ভোটের হার ২২ দশমিক ৫২%। ১ হাজার ৫৩টি ভোট বাতিল হয়েছে।
অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে এনপিপি’র আবুল মনজুর ৪,৬৫৩ ভোট, ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন ২,১২৬, স্বতন্ত্র প্রার্থী খোকন চৌধুরী ৮৮৫ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্টের প্রার্থী মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ১,১০৯ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জান্নাতুল ইসলাম পেয়েছেন ৪,৯৮০ ভোট।
ফল ঘোষণার কেন্দ্রে রেজাউল কিংবা তার প্রতিদ্বন্দ্বী শাহাদাত কেউই ছিলেন না। গতবার বিএনপি’র না থাকলেও নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন ঘোষণা কেন্দ্রে।
তবে এবার রেজাউলের প্রধান এজেন্ট নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল ছাড়া শীর্ষ নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি। সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন একবার এলেও থাকেননি সেখানে।
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এর আগের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ জ ম নাছির বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলমকে হারিয়েছিলেন ১ লাখের বেশি ভোটে। সেবার ভোট শুরুর তিন ঘণ্টার মধ্যে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন মনজুর। এবার বিএনপি নির্বাচনে থাকলেও “দখলদারিত্বের” কারণে কোনো ভোটই হয়নি বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল জীবনের প্রথম ভোটে জিতে মেয়রের চেয়ারে বসতে চলেছেন।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বড় সময় ধরে রেজাউল চট্টগ্রামের রাজনীতিতে প্রয়াত নেতা তিনবারের সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মনোনয়ন পেয়ে রেজাউল জানিয়েছিলেন, বিজয়ী হলে চট্টগ্রামকে মডেল সিটি হিসেবে সাজাতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর পথে হাঁটবেন তিনি।
সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, কোষাধ্যক্ষ ও সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যন আবদুচ ছালামসহ বেশকিছু নেতাকে পেছনে ফেলে শেষ মুহূর্তে রেজাউলের মনোনয়ন লাভ ছিল চট্টগ্রামের রাজনীতিতে এক বড় চমক।
মতামত দিন