সম্প্রতি আপনি বলেছেন, আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা নতুন সরকারের কোনো পদ নেওয়ার ইচ্ছা আপনার নেই। কেন?
আমি মনে করি, মানুষকে সাফল্যের শিখরে থেকে অবসর নেয়া উচিত। যারা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছে, তাদের বয়স আমার থেকে কমপক্ষে ২০ বছর কম। সেই কারণেই বলি, আমি বক্তব্য রাখবো, ক্যাম্পেইন করবো, মিটিং করবো কিন্তু প্রার্থী হবো না। সংসদে আমার সমবয়সী কয়জনকে পাবো আমি?
সংসদ সদস্য না হয়েও আমার বুদ্ধি, পরামর্শ, অভিজ্ঞতা দিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করবো।
আপনি কি প্রেসিডেন্ট হতে চান?
না, আমার এমন কোনও ইচ্ছা নেই। আমি বঙ্গবন্ধুর সাথে ৩ বছর কাজ করেছি। এখন আর এইসব পদে থাকার বিষয়ে আর কোনও আগ্রহ নাই। কিন্তু, কাজ পদে না থেকেও আমি কাজ করতে পারি। এখন নতুন প্রজন্মকেই দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে।
আপনার জোট ক্ষমতায় আসলে কীভাবে তারা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে?
ঐক্যফ্রন্টের সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেবে কে প্রধানমন্ত্রী হবে। মানুষ বলে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার মতো কেউ নেই, আমি তা ভাবি না। বরং আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমাদের নেতৃত্ব দেয়ার মতো অনেকেই রয়েছে।
এটা সত্যি যে, বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আহমেদের শূন্যতা পূরণ হবার নয়। কিন্তু, ৪০ বছর আমরা দেশ চালিয়ে এই পর্যন্ত এসেছি।
এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। আমরা সকলেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় অংশ নেবো। অমি আশাবাদী, বেছে নেয়ার মতো অনেক যোগ্য মানুষই রয়েছেন।
বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে বলে দাবি করেছে বিরোধী দলগুলো। আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ করতে চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
আমরা জোর দিচ্ছি জনগণের পদক্ষেপের উপরে, এটাতেই গুরুত্ব দিচ্ছি। বিরোধী দলগুলোর পক্ষে নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপি থামানো কঠিন।
তাই আমাদের গুরুত্বের বিষয় জনগণের কাছাকাছি যাওয়া, তাদের অধিকার তাদের কাছে তুলে ধরা। আমরা চাই, জনগণ দুর্নীতি রুখে দাঁড়াক। নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করুক।
জনগণ পরিবর্তন চায়। তারা এর জন্য তৈরী। আমরা এই বার্তাটাই তাদের কাছে পৌঁছে দিতে চাই। তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
জনগণের অধিকার কোনো দল নিশ্চিত করতে পারে না। জনগণকেই নিজেদের অধিকার নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও ভোটাররা যদি তাদের ভোটার অধিকার নিশ্চিত করতে পারে, ভোটার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে - তবেই এসব বন্ধ হবে।
গণতন্ত্রের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো জনগণ - তারাই সকল ক্ষমতার উৎস।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সশস্ত্র বাহিনীর হাতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা তুলে দেওয়া কি গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ হবে?
একসময় পুলিশের ভূমিকা খুব শক্তিশালী ছিল। কিন্তু এখন পুলিশের ভেতরেও দলীয় ব্যাপারটা চলে এসেছে।
যেমন, পুলিশ প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং এজেন্টদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড খতিয়ে দেখছে। তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এটা তারা করছে। বিরোধীদলের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন লোকদের নির্মূল করতে চায় তারা।
দুর্নীতিগ্রস্থ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একটি দেশকে পরিচয় সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। একটি দেশের অস্তিত্বের জন্য এটি একটি বড় প্রশ্ন। আমি এসব বিষয় নিয়ে খুব শঙ্কিত।
মানুষ পুলিশের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে (এবং এখন) সেনাবাহিনী সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য। কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি দেখলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
রাজনৈতিক দলের অধীনে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠ হবে বলে আপনি মনে করেন?
আমরা সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছি। সরকার সুষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারে, নাও পারে।
তারা যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য না। সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বা সমর্থন করে এমন লোকদের খুঁজছে তারা। নির্বাচন নিজেদের পক্ষে নেওয়ার জন্য তাদের বিশ্বাসযোগ্য কর্মচারী হিসেবে ব্যবহার করতে চায় তারা (সরকার)।
এই ঘটনাগুলো আমাদের গণমাধ্যমগুলো পুরোপুরিভাবে তুলে ধরেনি। সরকারে এই অপচেষ্টা চিত্র সব ধরনের গণমাধ্যমগুলোকে তুলে ধরা উচিৎ ছিল।
বিএনপির নির্বাচনী প্রতীকের অধীনে জামায়াতকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে যাচ্ছে। এর মানে কী এটা না—যে আপনারা একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন?
এটা আমার আরও ভালোভাবে জানতে হবে এবং আলোচনা করতে হবে। শিগগিরই আমরা এই প্রশ্নটা করবো। এটা আমার চিন্তার ভেতরে ছিল না যে—একই প্রতীক নিয়ে জামায়াত ও আমাদের দলের প্রার্থীরা নির্বাচনে যাবে। কারণ, সবসময় আমাদের বলা হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক হয়েছে সেখানে জামায়াত ভূমিকা রাখে না। এর ওপর ভিত্তি করে আমরা এই প্লাটফর্ম করেছি।