Tuesday, March 25, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

নুরের সঙ্গ ছাড়লেন ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের ২১ নেতা

নেতাদের অভিযোগ, ছাত্র অধিকারের কেন্দ্রীয় নেতারা নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদে গিয়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করছে

আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৩, ০৯:২৫ পিএম

ছাত্র অধিকার পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২১ নেতা। সংগঠন ছাড়ার কারণ হিসেবে তারা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে “গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও লেজুড়বৃত্তির” অভিযোগ এনেছেন।

দলত্যাগী নেতারা বলছেন, ছাত্র অধিকারের কেন্দ্রীয় নেতারা নুরুল হকের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদে গিয়ে দলীয় লেজুড়বৃত্তি করছেন। এতে স্বতন্ত্র ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্র অধিকার পরিষদের অবস্থান ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

রবিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির সবাই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খানসহ বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় লিখিত বক্তব্যে ২১ নেতার সই ছিল।

লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়, “গণঅধিকার পরিষদের সাম্প্রতিক কাউন্সিলে (নূর) নিয়ম অমান্য করে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব ভোট দিয়েছেন। এ অবস্থায় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে তারা ছাত্র পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।”

ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আসিফ মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনা ও অনুচ্ছেদ ৮ (লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য) এর এক নম্বর ধারায় দলীয় দাসত্ব ও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির বাইরে স্বাধীন ধারায় ছাত্র রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করার কথা বলা হয়েছে। যা অমান্য করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।”

তিনি বলেন, “গত ১০ জুলাই ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনা ও অনুচ্ছেদ ৮ এর ওই ধারা লঙ্ঘন করে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক গণঅধিকার পরিষদের লেজুড়বৃত্তি করার অভিযোগ উত্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এছাড়াও লিখিত অভিযোগ জানায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।”

“গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করায়, গঠনতান্ত্রিকভাবে তাদের পদ শূন্য হলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ পরবর্তী দুই সপ্তাহেও কেন্দ্রীয় পরিষদ উক্ত বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র ও ছাত্র সমাজের প্রতি প্রতিশ্রুত আদর্শের বিচ্যুতি ঘটেছে বলে আমরা মনে করি।”

পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “এমতাবস্থায় লেজুড়বৃত্তিহীন ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার আদর্শ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা একযোগে পদত্যাগ করছি।”

সম্প্রতি গণ অধিকার পরিষদে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। দলের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচির নুরুল হক নুরের বিবাদে পাল্টাপাল্টি অপসারণের ঘোষণা আসে। যেখানে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল নুরুল হকের পক্ষ নেন। এর মধ্যেই রেজাকে বাদ রেখে পুরানা পল্টনের প্রীতম-জামান ভবনে সোমবার সম্মেলনে বসে নুরের পক্ষ। সেই সম্মেলনে ইয়ামিন মোল্লা ও আরিফুল ইসলাম আদিবকে ভোটার করা হয়।

এনিয়েই ছাত্র অধিকার পরিষদেও অস্থিরতা চলছিল। এমন পরিস্থিতিতেই রবিবার সংবাদ সম্মেলন ডেকে ছাত্র অধিকারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এ বিষয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, “২০১৯ সালে ছাত্র অধিকার পরিষদের খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণীত হয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান গঠনতন্ত্রটি একটি খসড়া গঠনতন্ত্র। এটিকে গাইডলাইন ধরেই আমরা সংগঠন পরিচালনা করতাম। ২০১৯ সালের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা আন্দোলনকেন্দ্রিক একটি সংগঠন ছিলাম। ২০২০ সালে রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ ঘটে। আমাদের সংগঠনে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এখনো চলমান। আগামী কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত হবে।”

লেজুড়বৃত্তির অভিযোগের বিষয়ে আরিফুল বলেন, “আমরা দলীয় লেজুড়বৃত্তির জায়গা থেকে গণ অধিকার পরিষদের পদ নিইনি। বরং গণ অধিকারের প্রথম কাউন্সিলে দলের উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদের দুজনকে (তিনি ও বিন ইয়ামিন) সম্মানসূচক ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছিল। আমাদের এই সদস্যপদ কোনো দাপ্তরিক বা সাংগঠনিক কাজের জন্য নয়৷ এ ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রে কোনো বাধা নেই।”

২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন থেকে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ গঠন করা হয়। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে এই সংগঠনের প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুল হক। তার আরেক সঙ্গী আখতার হোসেন হয়েছিলেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনের নাম বদলে ছাত্র অধিকার পরিষদ রাখা হয়।

   

About

Popular Links

x