খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি না দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো রাজনীতি হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেছেন, “খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য মতামত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, আইনি প্রয়োগ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে তথ্য উপস্থাপন করেছেন তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।”
বুধবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনের বরাতে আইনমন্ত্রী বলেন, “সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আইনমন্ত্রী এক সময় বলেছিলেন যে, দণ্ড স্থগিত করে বাসায় থাকতে দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। এটা পারে শুধু আদালত। অথচ তার কিছু দিন পরেই সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশনেত্রী বাসায় এসেছিলেন।’ ফখরুল সাহেবের এই বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”
বিএনপি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার তুলনা করার চেষ্টা করেছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনা যখন চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন, তিনি তখন কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বা কয়েদি ছিলেন না। তিনি তখন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপিয়ে দেওয়া সব কয়টি মামলায় নিঃশর্ত জামিনে ছিলেন। তাকে যে জামিন দেওয়া হয়েছিল, সেখানে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়নি।”
খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে শর্ত পরিবর্তন করার সুযোগ আছে- এমন আলোচনা প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, “আইনে বলা আছে শর্তযুক্ত বা শর্তমুক্ত। শর্ত যদি দেওয়া হয়, যাকে শর্ত দেওয়া হচ্ছে তার মানতে হবে। এই সবগুলো হয়ে গেছে। আইনে আবার খোলার অবকাশ নেই। এটাকে আমরা বলি, পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ ট্রানজেকশন।”
খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, “যেকোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন, এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। তবে প্রধানমন্ত্রী ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী তাকে যে চিকিৎসার সুবিধা দিয়েছেন সেটা পুনর্বিবেচনার আর কোনো সুযোগ নেই।”
প্রসঙ্গত, গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে। মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা নিয়মিত তার স্বাস্থ্য চেকআপ করছেন। এর মধ্যে দুইবার কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়েছে তাকে।
৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া কিডনি, ফুসফুস, হৃদরোগ ও লিভার জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন, খালেদা জিয়ার জন্য যে চিকিৎসার দরকার তা দেশে নেই। এ জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া জরুরি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালে কারাগারে যান। দেশে কোভিড মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার।