দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনে দল মনোনীত প্রার্থী ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদ লাখপতি থেকে কোটিপতি হয়েছেন। এমপি হওয়ার আগে তার তেমন জমি-জমা না থাকলেও এখন কয়েক একর জমিরও মালিক হয়েছেন। ঢাকা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া তার নির্বাচনী হলফনামার সম্পদ বিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বেনজীর আহমদ প্রায় পাঁচ দশক ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত। শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগ করেছেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের হয়ে সংসদ সদস্য (এমপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য হন ২০০৮ সালে।
এর মধ্যে ২০১৪ সালে ভোট থেকে বিরত ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে জনশক্তি রপ্তানিসহ নানা ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট এই নেতা সংসদ সদস্য হওয়ার আগে ছিলেন লাখপতি। ছিল না তেমন জমি-জমা। তবে নির্বাচিত হয়ে তিনি বনে গেছেন কোটিপতি। হয়েছেন কয়েক একর জমির মালিক।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-২০ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বেনজির আহমদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। এ আসনটিতে এবার বেনজির আহমদসহ ছয়জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
গেল দুই সংসদ নির্বাচন ও এবারের নির্বাচনের হলফনামা থেকে জানা গেছে, বেনজীর আহমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। এখন তার মোট বার্ষিক আয় ৫ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার ৭ টাকা। যা
বেড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় বেনজীর আহমদের “আহম্মদ এন্টারপ্রাইজ” নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একটি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল তার তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেবার যুক্ত হয় “আহমদ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি আমদানি রপ্তানি ও কমিশন এজেন্ট” এবং “আহমদ রিয়েল এস্টেট ডেভলপার”।
আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে আরও দুটি। সবগুলো প্রতিষ্ঠানই পরিচালিত হয় ঢাকার ঠিকানা থেকে।
লাখপতি থেকে কোটিপতি
২০০৮ সালে বেনজীর আহমদের নগদ অর্থ ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সেসময় তার স্ত্রীর নামে ছিল ৪ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা।
২০১৮ সালে তার ব্যবসা থেকে আয় দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৫ টাকায়। তখন নির্ভরশীলদের আয় ছিল ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৫ টাকা।
তবে, এমপি বেনজীর এখন কোটিপতি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেখা গেছে, বর্তমানে তার ব্যবসা থেকে আয় ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার ৭ টাকা। সংসদ সদস্য ভাতা পান ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও আহমেদ লজিস্টিকস লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে ১২ লাখ টাকা পেয়েছেন। সবমিলিয়ে তার মোট বার্ষিক আয় ৫ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার ৭ টাকা।
তার স্ত্রী ও ছেলের ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় যথাক্রমে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা।
বর্তমানে তার নিজের ব্যাংকে জমা আছে ১ কোটি ৪ লাখ ৩৯ হাজার ১৯৮ টাকা, স্ত্রীর ব্যাংকে আছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৭ টাকা ও ছেলের আছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ টাকা।
বর্তমানে তার তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। ২০১৮ সালে এ ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৩ হাজার ৪৬৩ টাকা। গত পাঁচ বছরে তার ৩ কোটি ৮ লাখ টাকার বেশি ঋণ কমেছে।
হয়েছেন অঢেল জমির মালিক
২০০৮ সালে জমা দেওয়া বেনজির আহমদের হলফনামার তথ্য বলছে, কৃষি, অ-কৃষি কোনো জমি ছিল না তার। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৫ লাখ টাকা মূল্যের আড়াইতলা বাড়ি ও ৫৬ শতাংশ জমি ছিল।
২০১৮ সালে ৭৯ লাখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক মূল্যের ১৫৫.২৫ শতাংশ কৃষি জমির মালিক হন তিনি।
আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯০ টাকা মূল্যের ৩৪৪.৭৫ শতাংশ কৃষিজমি আছে।
২০০৮ সালে নিউ ইস্কাটনে দিলু রোডের ১৬/এ ভবনে এক কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার দুইটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক ছিলেন তিনি।
২০১৮ সালের হলফনামায় অ্যাপার্টমেন্ট দু’টির দাম কমিয়ে দেখানো হয় ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। এবারও অ্যাপার্টমেন্ট দু’টির একই দাম দেখানো হয়েছে। পুরনো দুই আ্যপার্টমেন্ট ছাড়াও ৮ কোটি ৮৬ লাখ ৬৪ হাজার ৩১০ টাকা ও ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার আরও দুইটি আ্যপার্টমেন্টের মালিক তিনি। পাশাপাশি গেল পাঁচ বছরে ১ কোটি ৭২ লাখ ৫ হাজার টাকার দোকানের মালিক হয়েছেন তিনি।
এছাড়া তিনি ৪০ লাখ ২৩ হাজার ২৪০ টাকার ১০ কাঠা জমির মালিক। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া আড়াইতলা বাড়িটিও আছে তার।
স্বর্ণ কমেছে, আসবাবপত্র-ইলেকট্রনিক্স ও গাড়ি বেড়েছে
২০০৮ সালে বেনজির আহমদের সোনা ছিল ২০ তোলা। ২০০৮ সালে যার বাজারমূল্য ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সেসময় তার স্ত্রীর ছিল দেড় লাখ টাকা বাজারমূল্যের ৪৫ তোলা সোনা। ২০১৮ সালে স্ত্রীর সোনার পরিমাণ একই থাকলেও বেনজিরের নিজের সোনা কমে হয় ১৫ তোলা। তবে এখন বেনজিরের কোনো সোনা নেই। আর স্ত্রীর কাছে আছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা সোনা।
অপরদিকে ২০০৮ সালের আগে বেনজির আহমদের বাড়িতে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বিভিন্ন আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ছিল। ২০১৮ সালে ছিল চার লাখ ২০ হাজার টাকার। আর বর্তমানে তার বাসায় আট লাখ টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রয়েছে।
২০০৮ সালে কোনো গাড়ির বিবরণ ছিল না বেনজির আহমদের হলফনামায়। তবে ২০১৮ সালে তিনি ৭২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার গাড়ির মালিক হন। আর ২০২৩ সালে এসে তিনি এখন আগের গাড়ি ছাড়াও এক কোটি ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫০ টাকার আরেকটি গাড়ির মালিক হয়েছেন।