অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশমালার কিছু বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। এ বিষয়ে দলের অবস্থান তুলে ধরে শনিবার সকালে গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (২৪ মার্চ) অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত জমা দেওয়ার সময়ে এ বিষয়ে দলের বক্তব্যও জানাবে দলটি।
বিএনপি মহাসচিব দলের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটের অবস্থা ও কমিশনের সদস্যদের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য ও বিশেষ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যে মিল পাওয়া যায়, যাতে জনমনে প্রশ্নের জন্ম হতে পারে যে, সকল বিষয়গুলো যেন একটি পূর্ব পরিকল্পনার অংশ, যা গণতন্ত্রের স্বার্থের পক্ষে কি-না বলা মুশকিল।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “সুপারিশমালা পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে যা অনভিপ্রেত। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্র, জনগণের মালিকানার প্রতিফলন হয় নির্বাচিত সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ পর্যালোচনা করলে প্রতীয়মান হয় যে, রাজনীতিবিদরা অপাঙক্তেয় এবং অনির্বাচিত লোকদেরই দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করাই শ্রেয়।”
কী কী বিষয়ে প্রশ্ন এবং কোন কোন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য-বিবৃতির সাথে মিল পাওয়া তা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনারা সাংবাদিক হিসেবে অনেকগুলো জিনিস বুঝতে পারছেন। তাদের প্রস্তাবগুলো যেটা কমিশনের, তার অনেকগুলো মিডিয়াতে চলেই এসেছে। সেখানে দেখবেন যে, ওই রাজনৈতিক দলগুলোর বা ব্যক্তির প্রস্তাব অনেকটাই একই রকম আসছে।”
তিনি বলেন, “স্পেসিফিক এখন আমি বলতে চাচ্ছি না। আগামীকাল আমাদের যে টিম যাবে সেই টিম কথাবার্তা বলার পরে আপনাদের সাথে তারা কথা বলবেন।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “ন্যাশনাল কন্টিটিউশনাল কাউন্সিল-এনসিসি নামে একটা ফ্রেমের প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটার গঠন প্রক্রিয়া ও কার্যপরিধি বর্ণনা করা হয়েছে, তাতে সমস্ত স্তরে স্তরে দেখা যায় অনির্বাচিত বিভিন্ন ব্যক্তিরা এই সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন এবং সাংবিধানিকভাবে তাদেরকে ক্ষমতায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে দেখা যাবে নির্বাচিত প্রতিনিধির আর কোনো গুরুত্ব নেই। প্রায় সকল গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলী রাষ্ট্রের অনির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সম্পন্ন হবে যদি এগুলো গৃহীত হয়।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে যে স্প্রেডশিট পাঠিয়েছে, তাতে শুধু “হ্যাঁ” আর “না” অপশন রয়েছে। সংবিধানের “প্রস্তাবনার” মতো অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সংস্কার কমিশনের সুপারিশে থাকলেও সেটা স্প্রেডশিটে উল্লেখ করা হয়নি। স্প্রেডশিটে ৭০টির মতো প্রস্তাব উল্লেখ থাকলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা ১২৩টির মতো বলে জানিয়েছে বিএনপি।
একইভাবে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাই বিএনপি মনে করছে, স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশগুলোর ওপর মতামত সংযুক্ত করে দিলে তবেই বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সংস্কার আগে না নির্বাচন পরে, কিংবা নির্বাচন আগে না সংস্কার পরে এ ধরনের অনাবাশ্যক বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সাথে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি চাটার অব রিফর্ম (সংস্কার সনদ) তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে যা বাস্তবায়ন করবে।”
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকেই রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকায় জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসনকে ব্যবহার করার নানা লক্ষণ ও প্রমাণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে, যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মোটেই সুখকর নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন।