নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা কমপক্ষে তিন মাস বাড়াতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিবকে দেওয়া এক লিখিত আবেদনে এই অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসির কার্যালয়ে গিয়ে লিখিতভাবে এই আবেদন জানিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন এবং সদস্য মনিরুজ্জামান।
ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর “নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন” শিরোনামে এই চিঠি দিয়েছে দলটি।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গণ-অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়।
এই কমিশন একটি প্রতিবেদনসহ তাদের সুপারিশ কর্তৃপক্ষের কাছে দিলেও এখন পর্যন্ত মৌলিক সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই বলে দাবি এনসিপি'র।
চিঠিতে এনসিপি বলেছে, নির্বাচন কমিশনের মৌলিক সংস্কার এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী না করেই বর্তমান ইসি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য গত ১০ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সংস্কারের আগেই দ্রুত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সমালোচনার জন্ম দেয়।
২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ও প্রাসঙ্গিক আইনের অধীনে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্তগুলোকে “সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক” বলে আখ্যা দিয়েছে এনসিপি।
এমন অবস্থায় দ্রুত নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত মৌলিক সংস্কার এবং নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা ন্যূনতম ৯০ দিন বাড়াতে অনুরোধ করেছে দলটি।
উল্লেখ্য, গত ১০ মার্চ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন কমিশন। বিজ্ঞপ্তিতে আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে নিবন্ধন পেতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আবেদন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে ইসি জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৯০ক এর অধীন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করতে ইচ্ছুক এবং রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮-এ উল্লিখিত শর্তাবলি পূরণে সক্ষম রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত নির্দেশিকা মোতাবেক বিধিমালায় সংযোজিত ফরম-১ পূরণপূর্বক আগামী ২০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।
প্রতি সংসদ নির্বাচনের পূর্বে নতুন দলের নিবন্ধন দিতে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন আহ্বান করে ইসি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেতে চাইলে তিনটি শর্তের যেকোনো একটি পূরণ করতে হয়। শর্তগুলো হলো—
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যেকোনো একটিতে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভের সমর্থনে প্রামাণিক দলিল; অথবা
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যেকোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নির্বাচনি এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোট সংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ ভোট লাভের সমর্থনে কমিশন বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র; অথবা
দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ, তা যে নামেই অভিহিত হোন না কেন, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর, অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং অন্যূন একশটি উপজেলা বা, ক্ষেত্রমত, মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং উক্তরূপ প্রতি উপজেলায় বা, ক্ষেত্রমত, খানায় অন্যূন দুইশ ভোটার সদস্য হিসেবে দলের তালিকাভুক্ত থাকার সমর্থনে প্রামাণিক দলিল।
নিবন্ধীকরণে আগ্রহী রাজনৈতিক দলকে স্বীয় লেটারহেড প্যাডে দরখাস্ত করতে হবে এবং দরখাস্তের সঙ্গে নিম্নলিখিত আবশ্যকীয় দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে-
- দলের গঠনতন্ত্র
- দলের নির্বাচনি ইশতেহার, যদি থাকে
- দলের বিধিমালা, যদি থাকে
- দলের লোগো এবং পতাকার ছবি
- দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের পদবীসহ নামের তালিকা।
- দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের নাম এবং উক্ত অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ স্থিতি
- দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ
- দলের নিবন্ধনের দরখাস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র
- নিবন্ধন ফি বাবদ অফেরতযোগ্য পাঁচ হাজার টাকা সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বরাবরে জমাকৃত ট্রেজারি চালানের কপি (ট্রেজারিতে টাকা জমাদানের কোড নম্বর-১০৬০১০১১০০১২৫-১১০০০০০০০-১১০০১০০০-১৪২২২০৪)
কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর উক্ত দলের অনুকূলে কমিশন ফরম-৩-এ একটি নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রদান করবে এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবে।
জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাঁচটি দল ইসির নিবন্ধন পেয়েছে। দলগুলো হলো আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি। এ ছাড়া বিজ্ঞপ্তি জারি করার আগেই নতুন ১৩টি দল ইসিতে আবেদন করেছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৯টি।