Wednesday, July 09, 2025

সেকশন

English
Dhaka Tribune

এনসিসি গঠনের বিপক্ষে বিএনপি

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিএনপি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদ ও সংস্থায় নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবকে সমর্থন করে না, কারণ প্রস্তাবিত কাউন্সিলের কোনো জবাবদিহিতা নেই।

তিনি বলেন, ‘‘একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা এমন কোনো প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করতে পারি না, যার কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও কাজ আছে, কিন্তু জবাবদিহি নেই। এই ধরনের কাজসহ একটি পৃথক সংস্থা তৈরি করা ভারসাম্যহীন পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে।”

বুধবার (১৮ জুন) রাজধানী ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংস্কার আলোচনার দ্বিতীয় দফার অধিবেশনের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে সালাহউদ্দিন এই মন্তব্য করেন।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, এনসিসি সংস্কার কমিশনের একটি প্রস্তাব, যাতে রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে ৯ সদস্যের একটি কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ উভয়ের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, বিরোধীদলের মনোনীত দুইজন ডেপুটি স্পিকার এবং উভয় কক্ষের একজন করে সদস্য অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত এনসিসি কার্যকর থাকবে।

প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের পর নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধান উপদেষ্টা, দুইজন উপদেষ্টা, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত ৫ সদস্যের একটি সংস্থা দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

এনসিসির কার্যাবলী ও কর্তৃত্ব প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশন, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং সাংবিধানিক আইনে নির্ধারিত অন্যান্য পদসহ গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক ব্যক্তিত্বদের নিয়োগকে অন্তর্ভুক্ত করবে।

প্রস্তাবিত কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য নামও সুপারিশ করতে পারবে।

সালাহউদ্দিন বলেন, “তারা (বিএনপি) আগে ব্যাখ্যা করেছেন কেন তারা এই এনসিসি ধারণার সঙ্গে একমত হতে পারে না এবং পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে এই এনসিসির জন্য প্রস্তাবিত কার্যাবলী এবং দায়িত্বগুলো ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আইন এবং সাংবিধানিক বিধানের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা জিজ্ঞাসা করতে পারি, অথবা আপনারা (সাংবাদিকরা) জিজ্ঞাসা করতে পারেন- এত দায়িত্ব ও ক্ষমতার মধ্যে এবং এত নিয়োগ (সম্পাদনা) করার পরেও জবাবদিহি কোথায়? জবাবদিহি আছে কি? কেউ নেই। জবাবদিহি ছাড়া আমরা কোনো প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন করতে পারি না।’’

এনসিসির পক্ষে এই যুক্তি খণ্ডন করে যে, এই নিয়োগগুলো প্রধান নির্বাহী (সরকারের) করে, তাই দেশে অরাজকতা তৈরি হয়।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘আমাদের যা দরকার তা হলো একটি সুষম রাষ্ট্রীয় কাঠামো, সামাজিক ব্যবস্থা এবং শাসন ব্যবস্থা। যদি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকত, তাহলে এইভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হত না।’’

তিনি বলেন, “পুরো সংসদ বিলুপ্ত করা যাবে না বা পুরো নির্বাহী বিভাগকে এই সমস্যার জন্য দায়ী করা যাবে না।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যদি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও সাংবিধানিকভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাহী বিভাগ ও সংসদ স্থায়ীভাবে তাদের কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণ হারাবে। যদি (এই ব্যবস্থাগুলোতে) কোনো ত্রুটি থাকে, তবে তা একটি স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। এ কারণে বিএনপি বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব করে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি কিছু আদালতের রায়, সাংবিধানিক সংস্কার ও অনুমোদনের মাধ্যমে সত্যিকারের স্বাধীন বিচার বিভাগের দিকে ধীরে ধীরে অগ্রগতি হবে। তাহলে এই ব্যবস্থাগুলো সুসংরক্ষিত থাকবে।’’

বুধবার ঐক্যমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে সংস্কার আলোচনায় বিএনপি, এনসিপি এবং জামায়াতসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল যোগ দেয়। বুধবার এনসিসি গঠন এবং রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্ব নিয়ে আলোচনা হয়।

তবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক পদে নিয়োগ পরিচালনার জন্য একটি সাংবিধানিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। যদিও কয়েকটি দল কিছু নীতিতে ভিন্নমত পোষণ করে, তবুও সবাই একটি সাংবিধানিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছে।’’

তিনি বলেন, “কমিশন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পর্কিত দুটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে- একটি সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন থেকে এবং অন্যটি নির্বাচনী সংস্কার কমিশন থেকে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং কর্তৃত্বের ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।”

   
Banner

About

Popular Links

x