লাতিন আমেরিকা থেকে বিশ্বকাপ আসে ইউরোপে। ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে ১৯৩৪ সালের আয়োজক ইতালি। এই বিশ্বকাপ দিয়েই শুরু হয় বাছাই পর্ব। ৩৬ দলের অংশগ্রহণে হওয়া বাছাই পর্ব উতরে মূল পর্বে জায়গা নিশ্চিত করে ১৬ দল। তাদের নিয়েই শুরু হয় ‘নকআউট’ বিশ্বকাপ। প্রথম আসরের মতো ইতালির প্রতিযোগিতায় কোনও গ্রুপ পর্ব ছিল না। সরাসরি নকআউট পর্ব দিয়ে শুরু হয় প্রতিযোগিতা।
চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে ছাড়াই হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। লাতিন আমেরিকার দেশটির আয়োজিত ১৯৩০ সালের আসরে ইউরোপ থেকে মাত্র চারটি দল অংশ নেওয়ায় ইতালিতে খেলতে তারা অস্বীকৃতি জানায়। নানা ঘটনা ও বিতর্কের জন্ম দেওয়া এই বিশ্বকাপের শিরোপা জেতে ইতালি। ফাইনালে স্বাগতিকরা ২-১ গোলে হারায় চেকোস্লোভাকিয়াকে।
যদিও এখনও মনে করা হয়, ইতালির চ্যাম্পিয়ন হওয়া যতটা না মাঠের খেলায় ছিল, তার চেয়ে বেশি খেলা হয়েছে মাঠের বাইরে। ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ জিততে তখনকার ইতালির একনায়ক বেনিতো মুসোলিনির ‘ইশারা’ থাকার চর্চা এখন আছে। এমনও বলা হয়ে থাকে, বিশ্বকাপে ইতালির খেলার ম্যাচ রেফারিও ঠিক করে দিতেন মুসোলিনি! বিতর্কিত এই বিষয়গুলোর ঠিকঠাক প্রমাণ অবশ্য কখনোই পাওয়া যায়নি।
একনজরে:
আয়োজক: ইতালি
মোট দল: ১৬
ভেন্যু: ৮
চ্যাম্পিয়ন: ইতালি
রানার্স-আপ: চেকোস্লোভাকিয়া
মোট ম্যাচ: ১৭
মোট গোল: ৭০
সর্বোচ্চ গোলদাতা: অলদ্রিচ নিয়েদলি-৫ (চেকোস্লোভাকিয়া)
ফরম্যাট: প্রথম বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল গ্রুপ পর্ব দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বকাপে অবশ্য ফরম্যাটে বদল আসে। ইতালির আসর শুরু হয়েছিল নকআউট পর্ব দিয়ে। ১৬ দলের প্রতিযোগিতায় জয়ী দল সরাসরি নিশ্চিত করে কোয়ার্টার ফাইনাল, এরপর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। নির্ধারিত ৯০ মিনিট খেলা সমতা থাকলে ম্যাচ গড়াতো অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও ফল নিষ্পত্তি না হলে পরের দিন নতুন করে খেলা শুরু হতো।
প্রথম রাউন্ড/শেষ ষোলো: ১৯৩০ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট আর্জেন্টিনা প্রথম রাউন্ড থেকেই ছিটকে যায় সুইডেনের বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরে। স্পেনের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিলও। সুইডেন ও স্পেনের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করে ইতালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি।
কোয়ার্টার ফাইনাল: কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা মিলেছিল ‘রি ম্যাচ’-এর। ইতালি-স্পেনের শেষ চারের দ্বৈরথ নির্ধারিত সময় শেষ হয় ১-১ ড্রতে, অতিরিক্ত সময়েও স্কোরলাইন থাকে একই। তাই পরের দিন (১ জুন ১৯৩৪) আবার নতুন করে খেলায় নামে তারা, সেখানে স্পেনকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে স্বাগতিকরা। ইতালির সঙ্গে শেষ চার নিশ্চিত করে অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া ও জার্মানি।
সেমিফাইনাল: অস্ট্রিয়াকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ইতালি। আর অলদ্রিচ নিয়েদলির হ্যাটট্রিকে জার্মানিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে তাদের সঙ্গী হয় চেকোস্লোভাকিয়া।
ফাইনাল: রোমের স্তাদিও নাসিওনালের ফাইনাল হয়েছিল জমজমাট। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবে। দ্বিতীয়ার্ধে স্বাগতিক সমর্থকদের হতাশ করে ৭১ মিনিটে চেকোস্লোভাকিয়া এগিয়ে যায় আন্তোনিন পুচের লক্ষ্যভেদে। তবে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ৯ মিনিট আগে ইতালিকে সমতায় ফেরান রাইমুন্দো অরসি। যাতে নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯৫ মিনিটে আনহেলো শিয়াভিও জাল খুঁজে পেলে বিশ্বকাপ জয়ের উল্লাসে মাতে ইতালি।