বাংলাদেশের আরেকটি দুর্দান্ত জয়ের সাক্ষী হতে পারতেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। এই জুটি মিলে এক পর্যায়ে দিশাহীন হয়ে পড়া বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত কূলে পৌঁছিয়ে দিয়েছিলেন। লক্ষ্যে পৌঁছাতে শেষ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র চার রান। নড়বড়ে তরীটিকে আর লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়নি। শেষ বলটি আরিফুল মেরে খেললেও অবিশ্বাস্যভাবে বাউন্ডারি বাঁচিয়ে ম্যাচ জেতায় ভূমিকা রাখেন আফগান শফিকউল্লাহ। এর আগে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ মিলে ৮৪ রানরে জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। শেষ ওভারে মুশফিক উঠিয়ে মারতে গিয়ে রশিদ খানের বলে আউট হন ৪৬ রানে। তার ৩৭ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চার। অপরপ্রান্তে মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ৪৫ রানে। তার ৩৮ বলের ইনিংসে ছিল ৩টি চার ও দুটি ছয়। বাউন্ডারি না হওয়ায় শেষ দিকে রান আউট হতে হয় তাকে। ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ থামে ১৪৪ রানে।
রশিদ খান, মজিবর ও করিম একটি করে উইকেট নেন। ম্যাচসেরা হন জয়ের আশা জাগানিয়া ইনিংস খেলা মুশফিক। আর সিরিজ সেরা রশিদ খান।
এর আগে শুরুটা ভালো ছিল না বাংলাদেশের। ১৪৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৯ ওভারে ৫৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল।
ওপেনার তামিম ইকবালকে দিয়ে শুরু। ৫ রানে ব্যাট করতে থাকা তামিমকে রাসুলির ক্যাচ বানান মজিবর। কিছুক্ষণ ধীরে সুস্থে খেলছিলেন সৌম্য সরকার। এরপরেই ঘটে বিপত্তি। ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফেরেন সৌম্য সরকার (১৫)। একই ভুলের শিকার হন লিটন দাস। ১২ রানে ব্যাট করতে থাকা এই ওপেনারও ফিরে যান রান আউটে। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ১০ রানের বেশি ভূমিকা রাখতে পারেননি। তাকে তালুবন্দি করান করিম জানাত। ৪ উইকেট হারিয়ে দিশাহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। তাদের কূলের কাছে পৌঁছে দিতে থাকে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর মারকুটে জুটি।
এর আগে আফগানিস্তানের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ১৪৫ রান। দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। তাই হোয়াইটওয়াশ এড়াতে তিন পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। সাব্বির, মোসাদ্দেক ও রুবেলকে বাদ দিয়ে দলে ভেড়ানো হয়েছিল মিরাজ, আবু জায়েদ ও আরিফুলকে। তাতেও আফগানদের আটকে রাখতে পারেনি। প্রমাণটা মেলে মিরাজের প্রথম ওভারেই। এই ম্যাচে ডাক পাওয়া মিরাজ ঘূর্ণি ভেলকি দেখাতে পারেনি। ফলে সেটা হয়ে পড়ে খুবই ব্যয়বহুল। আসে ১৮ রান!
উল্টো দিকে শুরুটা ভালো ছিল আফগানিস্তানের। রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে দেখে শুনে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ ও উসমান গনি। উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ৫৫ রান। অষ্টম ওভারে স্বস্তি ফেরান নাজমুল ইসলাম। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন শাহজাদ। বিদায় নেন ২৬ রানে।
পরের ওভারে ফিরে যান আরেক ওপেনার ওসমান গনি। ১৯ রানে ব্যাট করতে থাকা এই ব্যাটসম্যানকে বুক সমান উঁচু শর্ট বল দিয়েছিলেন আবু জায়েদ। হুক করার চেষ্টা করেছিলেন তার বলে। বল গিয়ে জমা পড়ে মুশফিকের হাতে। তাতেও থামেনি রানের চাকা। অপরপ্রান্ত ধরে আগ্রাসী ভঙ্গিতে খেলতে থাকেন অধিনায়ক আজগর স্ট্যানিকজাই। ১৭ বলে ৩ ছক্কায় করে ফেলেছিলেন ২৭ রান।
হুমকি হয়ে দাঁড়ানো আফগান অধিনায়ককে আর থিতু হতে দেননি আজকে জায়গা পাওয়া আরিফুল হক। ১৩তম ওভারে তাকে সাব্বিরের তালুবন্দি করান আরিফুল। আফগানদের রানের গতি আটকাতে ১৫তম ওভারে ফের আঘাত হেনেছিলেন আবু জায়েদ। মোহাম্মদ নবিকে ফেরান মাত্র ৩ রানে।
তাতেও আটকানো যায়নি। শেষ দিকে রানের চাকায় গতি আনেন সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ও নাজিবুল্লাহ জাদরান। শেষ দিকে এই জুটিদে আঘাত হানেন সাকিব। নাজিবুল্লাহকে ফিরিয়ে ম্যাচের প্রথম উইকেট পান অধিনায়ক। ফেরেন ১৫ রানে। শেষ ওভারে নাজমুল ইসলামের ওভারটিতে বেশি রান নিতে পারেনি আফগানিস্তান। শফিকউল্লাহর উইকেটের বিনিময়ে তার ওভারে এসেছে তিন রান।
বাংলাদেশের পক্ষে ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন নাজমুল ইসলাম। নেন ২ উইকেট। আবু জায়েদ ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। এছাড়া সাকিব ১৬ রান দিয়ে ও আরিফুল ১৩ রান দিয়ে নেন ১টি।