ফেভারিটের তালিকায় তারা সবসময়। এবারও ব্যতিক্রম নয়, ২০১৮ সালের বিশ্বকাপেও জার্মানিকে ফেভারিট ভাবা হচ্ছে। সেটা যে শুধু বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন কিংবা র্যাংকিয়ে এক নম্বরে আছে বলে, তা নয়; অতীত ইতিহাস, বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স ও এবারের বাছাই পর্বের পরিসংখ্যান আমলে নিয়ে। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দুর্দান্ত সময় পার করে রাশিয়ার টিকিট নিশ্চিত করেছে চারবারের চ্যাম্পিয়নরা।
বাছাইয়ের ১০ ম্যাচের প্রত্যেকটি জিতেছে তারা। শুধু তা-ই নয়, জয়ের পথে গোল বন্যায় ভাসিয়েছে প্রতিপক্ষদের। নামের পাশে ৩০ পয়েন্ট যোগ করার পথে প্রতিপক্ষদের জালে বল জড়িয়েছে ৪৩বার। বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড় অবসর নিলেও গত তিন বছরে তরুণদের নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দল সাজিয়ে নিয়েছেন ইওয়াখিম ল্যোভ।
গ্রুপ পর্ব অবশ্য সহজ হওয়ার কথা নয় জার্মানদের জন্য। ‘এফ’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ মেক্সিকো, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়া। যদিও শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নামতে যাওয়া দলের গ্রুপ নিয়ে খুব বেশি ভাবনা থাকার কথা নয়।
জার্মানি ফুটবল দল
একনজরে:
অধিনায়ক: মানুয়েল নয়ার
কোচ: ইওয়াখিম ল্যোভ
ডাকনাম: ডি মানসাফট
র্যাংকিং: ১
বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে: ১৮বার- ১৯৩৪, ১৯৩৮, ১৯৫৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭০, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৮৬, ১৯৯০, ১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০২, ২০০৬, ২০১০, ২০১৪
বিশ্বকাপে সেরা সাফল্য: চ্যাম্পিয়ন- ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০, ২০১৪
ফিরে দেখা বাছাই পর্ব:
বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ২০১৮ সালের আসরে জায়গা না পাওয়ার এতটুকু শঙ্কা জন্মেনি কখনও। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বাছাইয়ে শতভাগ জয়ের রেকর্ড ধরে রেখে রাশিয়ার মূর পর্ব নিশ্চিত করে ইওয়াখিম ল্যোভের দল। ‘সি’ গ্রুপে নরওয়ের বিপক্ষে ৩-০ গোলের জয় দিয়ে বাছাই পর্ব শুরু করা জার্মানরা প্রতিপক্ষদের জালে করেছেন গোলোৎসব। ১০ ম্যাচে নিজেরা করেছে ৪৩ গোল, আর হজম করেছে মাত্র ৪ গোল। বাছাইয়ের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ও অতীত ইতিহাসে এবারও রাশিয়ায় নামতে যাচ্ছে ফেভারিট হিসেবে।
জার্মানির বিশ্বকাপ গ্রুপ:
‘এফ’ গ্রুপে রয়েছে জার্মানি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের গ্রুপে খেলতে হবে মেক্সিকো, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে।
জার্মানির বিশ্বকাপ সূচি:
১৭ জুন মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু হবে জার্মানির। ২৩ জুন দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে সুইডেনের বিপক্ষে। ২৭ জুন গ্রুপের শেষ ম্যাচে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়া।
১৭ জুন: মেক্সিকো
২৩ জুন: সুইডেন
২৭ জুন: দক্ষিণ কোরিয়া
থোমাস ম্যুলারনজরে থাকবেন:
থোমাস ম্যুলার: পেশাদার স্ট্রাইকার না হয়েও গোলমুখে তার মতো ভয়ঙ্কর খেলোয়াড় খুব কমই আছে ফুটবল বিশ্বে। বক্সের ভেতরে করে থাকেন তিনি পাখির চোখ। বিশেষ করে ছোট বক্সের সামনে ম্যুলারের সামর্থ্য বিস্ময়কর। উইং দিয়ে যেমন দলের আক্রমণকে ধারালো করতে পারেন, তেমনি ‘সেকেন্ড স্ট্রাইকার’ হিসেবেও পরীক্ষিত। প্রয়োজনে আবার মিডফিল্ডারের ভূমিকাতেও সাহায্য করতে পারেন দলকে। আর প্রতিযোগিতাটি যখন বিশ্বকাপ, তখন তার কার্যকরিতা আরও বেশি। দুই বিশ্বকাপে তার গোল সংখ্যা কত জানেন? ১০টি।
মেসুত ওয়েজিল: আর্সেনালের জার্সিতে খুব একটা ভালো মৌসুম কাটেনি ওয়েজিলের। যদিও জাতীয় দল জার্মানিতে তিনি বরাবরই দুর্দান্ত। বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের অবসরে তিনিই এখন মাঝমাঠের প্রাণভোমরা। উইং থেকে উঠে যেমন আক্রমণে গতি বাড়াতে পারেন, তেমনি ডিফেন্স চিড়া পাসে সতীর্থদের জন্য করতে পারেন গোলের সুযোগ। জার্মানির আক্রমণ ও মাঝমাঠের বল নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই নির্ভর করবে তার ওপর।
মিরোস্লাভ ক্লোসাফুটবল মহাযজ্ঞে থাকছেন না:
মিরোস্লাভ ক্লোসা: ব্রাজিলে খেলেছেন ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। ২০১৪ সালের আসর দিয়ে ক্লোসা হয়েছেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতাও। ৩৯ বছর বয়সে রাশিয়ায় যে তিনি থাকছেন না, সেটা জানাই ছিল। অভিজ্ঞ এই স্ট্রাইকারকে নিশ্চিতভাবেই মিস করবেন ফুটবলপ্রেমীরা জার্মানির খেলায়।
মারিও গোৎসে: জার্মানির ২০১৮ বিশ্বকাপ জয়ের ‘নায়ক’। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনালে গোৎসের গোলেই তো চতুর্থ শিরোপা ঘরে তোলে জার্মানরা। মারাকানার অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ফাইনালে ভলিতে চমৎকার গোল করে শিরোপা জেতানো গোৎসে এবার প্রাথমিক দলেই জায়গা পাননি।
শক্তি: টিম স্পিরিট।
দুর্বলতা: অভিজ্ঞতার জায়গায় কিছুটা ঘাটতি আছে।
ভবিষ্যদ্বাণী: ফাইনাল।
চূড়ান্ত স্কোয়াড:
গোলরক্ষক: মানুয়েল নয়ার (বায়ার্ন মিউনিখ), মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন (বার্সেলোনা), কেভিন ট্রাপ (প্যারিস সেন্ত জার্মেই); ডিফেন্ডার: জেরোম বোয়াটেং (বায়ার্ন মিউনিখ), মাথিয়াস গিনটার (বরুশিয়া মনশেনগ্ল্যাডবাখ), ইয়োনাস হেক্টর (এফসি কোলন), ম্যাট হামেলস (বায়ার্ন মিউনিখ), ইয়াশুয়া কিমিখ (বায়ার্ন মিউনিখ), মারভিন প্লাটিনহার্ট (হের্থা বার্লিন), অ্যান্টোনিও রুডিগার (চেলসি), নিকলাস সুলো (বায়ার্ন মিউনিখ); মিডফিল্ডার: ইউলিয়ান ব্রান্ট (বেয়ার লেভারকুসেন), ইউলিয়ান ড্রাক্সলার (প্যারিস সেন্ত জার্মেই), লিয়োন গোরেৎস্কা (শালকে), ইকেই গুন্ডোগান (ম্যানচেস্টার সিটি), সামি খেদিরা (জুভেন্টাস), টোনি ক্রোস (রিয়াল মাদ্রিদ), মেসুত ওয়েজিল (আর্সেনাল), সেবাস্টিয়ান রুডি (বায়ার্ন মিউনিখ); ফরোয়ার্ড: মারিও গোমেজ (স্টুটগার্ট), থোমাস ম্যুলার (বায়ার্ন মিউনিখ), মার্কো রয়েস (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), টিমো বেয়ারনার (আরবি লাইপসিক)।