গত নভেম্বরে যখন জাভি হার্নান্দেজ বার্সেলোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন ক্লাবের অবস্থা ছিল রীতিমত টালমাটাল। অর্থনৈতিকভাবে ক্লাব দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে, দলের হতশ্রী অবস্থা, নেই উপযুক্ত খেলোয়াড়; সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুম ইস্যু তো ছিলোই। অথচ পরবর্তী ১৩৪ দিনে সেই একই বার্সেলোনা যেন রীতিমতো অন্য এক দল। জাভির অধীনে সেই আমূল বদলে যাওয়া বার্সেলোনার কাছেই লা লিগায় ঘরের মাঠে ০-৪ গোলে নাস্তানাবুদ হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
রবিবার (২০ মার্চ) দিবাগত রাতে অধিনায়ক করিম বেনজেমা ও লেফটব্যাক ফার্ল্যান্ড মেন্ডিকে ছাড়াই মাঠে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। গোলেরও প্রথম ভালো সুযোগ সৃষ্টি করেছিল তারাই। কিন্তু ম্যাচের ৮ম মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়রের কাছ থেকে পাওয়া বলে ডি-বক্সের মাথা থেকে ফেদে ভালভার্দের নেওয়া শট কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান বার্সেলোনা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগান।
জবাবে বার্সেলোনাও পাল্টা আঘাত হানতে সময় নেয়নি। ৪ মিনিট পরেই ফাঁকায় থাকা পিয়েরে এমেরিক অবামেয়াংয়ের নেওয়া শট ঠেকিয়ে দেন রিয়ালের গোলপ্রহরী থিবো কর্তোয়া। পরে ওসমান ডেম্বেলের নেওয়া বাঁকানো শটও ফিরিয়ে দেন বেলজিয়ান গোলরক্ষক। মিনিট পাঁচেক পর রিয়াল ডি-বক্সের বাইরে থেকে ফেরান তোরেসের নেওয়া বাঁকানো শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে চলে যায়।
তবে ২৯ মিনিটে আর বার্সেলোনার এ জুটিকে আটকাতে পারেনি লস ব্লাঙ্কোসরা। মেন্ডির পরিবর্তে লেফটব্যাক হিসেবে নামা অধিনায়ক নাচো ফার্নান্দেজকে নাচিয়ে রাইট উইং থেকে ডেম্বেলের নেওয়া ক্রস থেকে মাথা ছু্ঁইয়ে কাতালানদের এগিয়ে দেন অবামেয়াং। কিছুক্ষণ পরেই সমতায় ফেরার ভাল সুযোগও পেয়ে গিয়েছিল রিয়াল। কিন্তু বার্সেলোনা গোলরক্ষককে একা পেয়েও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন ভিনিসিয়াস।
৩৪ মিনিটে আবারও গ্যাবনিজ স্ট্রাইকারের একটি প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দেন কর্তোয়া। কিন্তু এর ঠিক ৩ মিনিট পরেই ডেম্বেলের নেওয়া কর্নার থেকে হেডে লক্ষ্যভেদ করে বার্সেলোনার লিড দ্বিগুণ করেন ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরুহো। রিয়ালের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেই প্রথমার্ধ শেষে মধ্যবিরতিতে যায় জাভি হার্নান্দেজের শিষ্যরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু হওয়ার পর প্রথম মিনিটে দলকে ৩-০ গোলে এগিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন ফেরান তোরেস। কিন্তু কর্তোয়াকে একা পেয়েও বল গোল রাখতে ব্যর্থ হন এ স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। তবে পরের মিনিটে আর কোনো ভুল করেননি তিনি। রিয়াল ডিফেন্ডার ডেভিড আলাবার ভুল পাস থেকে ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ং বল বাড়িয়ে দেন অবামেয়াংয়ের দিকে। তার ফ্লিক থেকে পাওয়া বল জালে জড়াতে এবার ভুল হয়নি তোরেসের।
রিয়াল মাদ্রিদের দুঃস্বপ্নের ষোলোকলা পূর্ণ হয় মিনিট চারেক পরেই। বার্সেলোনার প্রান্ত থেকে জেরার্ড পিকের বাড়ানো লম্বা ফ্রি-কিক দারুণভাবে লুফে নিয়ে অবামেয়াংয়ের দিকে ঠেলে দেন তোরেস। গোল বাঁচাতে এগিয়ে আসা কর্তোয়ার মাথার ওপর দিয়ে চিপ করে দলের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় গোল করেন গ্যাবনিজ স্ট্রাইকার। প্রথমে লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা ওড়ালেও পরবর্তীতে ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারি (ভিএআর) সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে পরিবর্তন করায় গোলের বাঁশি বাজান রেফারি। ৫৭ মিনিটে হ্যাটট্রিকের সুবর্ণ সুযোগ পেলেও তা হেলায় নষ্ট করেন অবামেয়াং। তবে উঠে যাওয়ার আগ অব্দি ২ গোল ও ১ অ্যাসিস্ট নিয়ে তিনিই যে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় তা বলাই বাহুল্য।
ম্যাচের বাকি সময়ে বলের জন্য বার্সেলোনা খেলোয়াড়দের পিছনে হন্যে হয়ে ছুটেছে কার্লো অ্যানচেলত্তির শিষ্যরা। কিন্তু বিধ্বংসী কাতালানদের সামনে নতজানু হয়ে অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না ৩৪ বারের লা লিগা চ্যাম্পিয়নদের। শেষ পর্যন্ত সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নিজেদের সমর্থকদের সামনে ৪-০ গোলের ব্যবধানেই ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো এল ক্লাসিকোতে পরাজয় বরণ করে মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
তবে এমন হতাশাজনক পরাজয়ের পরও ২৯ ম্যাচ শেষে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা সেভিয়ার চেয়ে ৯ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে শীর্ষস্থানেই রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। পক্ষান্তরে, এক ম্যাচ কম খেলে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে বার্সেলোনার অবস্থান তৃতীয়।