দুই মৌসুম আগেও একরকম ধুঁকছিল এসি মিলান। তাদের মধ্যে ভর করেছিল ভীষণ হতাশা। তারপর তারা শরণাপন্ন হলো ইব্রাহিমোভিচের কাছে। ২০১৯ সালে পুরনো ক্লাবে ফিরলেন ইব্রা। তবে খেলতে পারেননি বেশিদিন। এরপরেই শুরু করোনা মহামারি। প্রায় দুইবছর মাঠের বাইরে।
এরপর যখন ফুটবল ফের মাঠে গড়ালো। ইব্রা বললেন, 'ক্লাবকে শিরোপা না জিতিয়ে অবসরে যাবেন না তিনি।' কথাগুলো সুইডিশ কিংবদন্তির মুখ দিয়ে নিসৃত হয়েছিল মাত্র মাস পাঁচেক আগে।
এবার তিনি দেখিয়েও দিলেন। সাসসুয়োলোকে ৩-০ গোলে হারিয়ে ১১ বছর পর শিরোপা জিতলো ইতালির অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব এসি মিলান। দুটি গোল এসেছে ফরাসি স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুর পা থেকে। আরেকটি করেছেন আইভরিয়ান মিডফিল্ডার ফ্র্যাঙ্ক কেসি।
ইব্রা গোল পাননি। তবে এই জয়ের অবদান স্বঘোষিত ইশ্বর নিতেই পারেন। তার দলে যোগ দেওয়ার পরেই যে এসি মিলানের খেলোয়াড়ি শারীরিক শক্তি প্রদর্শনের পুনর্জাগরণ!
২০১৮-১৯ মৌসুমে একের পর এক ম্যাচ হারছিলো এসি মিলান। হারাচ্ছিল পয়েন্ট। তালিকায় অবনতি ঠেকেছিল নিম্ন পর্যায়ে। তবে ইব্রা যোগ দেওয়ার পর বদলে যায় সমীকরণ। এই দলকে জিতিয়ে জিতিয়ে ইব্রা তুলে আনেন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।
যেকারণে সেই মৌসুমে মজা করে তিনি বললেন, 'সান্তা ক্লজ হয়ে তিনি দলের জন্য উপহার নিয়ে এসেছেন।'
বয়স ৪০ ছুঁয়েছে। তবুও তার ছন্দ যেনো সদ্য ফুটবল শুরু করা তরুণের মতো। যার প্রমাণ এসি মিলানে প্রথম মৌসুমে চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ইব্রার গোল সংখ্যা ১০।
ক্যারিয়ারে বার্সেলোনা, পিএসজি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ইন্টার মিলানে সফর শেষে আবারো ফেরার পর তিনি বলেছিলেন, 'এখানেই ভালো আছেন তিনি। আর এটাকেই নিজের করে গড়ার ইচ্ছা তার।'
সুইডিশ কিংবদন্তি বললেন, 'প্রতিদিন সকালে আমি মিলানেল্লোয় (মিলানের অনুশীলন মাঠ) যাই এবং কখনোই বাড়ি ফেরার তাড়না অনুভব করি না। মনে হয় যেন, বাড়িতেই তো আছি। ২০১০ সালে প্রথম যখন মিলানে এসেছিলাম তখনই এমন অনুভূতি হয়েছিল।'
ইতালির রিগো এমিলোর মাপেই স্টেডিয়ামে ১১ বছর ধরে আধারে থাকা নিজের বাড়িতে আশপাশের সব আলো এনে উপহার দিলেন ইব্রা ও তার সঙ্গীরা।
শেষ ম্যাচের আগে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্টার মিলানের চাইতে ২ পয়েন্টে এগিয়ে ছিল এসি মিলান। ফলে সাসসুয়োলোকে হারালে শিরোপা হাতে পাওয়ার হিসাব ছিল সহজ। ড্র করলে হয়তো অপেক্ষা বাড়তো ইন্টারের পরাজয় গণনার জন্য।
তবে জেদ থেকেই হয়তো সেইদিকে যায়নি এসি মিলানের ফুটবলাররা। আরেকটু খুলে বললে ফরাসি স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুর জেদে আজই ফলাফল এসি মিলানের পক্ষে আসতে বাধ্য হয়েছে। এ কারণে খেলা শুরুর ৩২ মিনিটেই পর্তুগিজ উইঙ্গার রাফায়েল লিয়াওয়ের সহায়তা নিয়ে ২-০ তে দলকে এগিয়ে নেন তিনি। এরপর আরেক গোল করেন মিডফিল্ডার ফ্র্যাঙ্ক কেসিরও।
কিন্তু পুরো সময়ে এসি মিলানের গোলপোস্টে একবারও বল ঢোকাতে পারেনি সাসসুয়োলো। ফলে ৩-০ তেই ম্যাচের শেষ নির্ধারণ হয়।
দুই দশকের ক্যারিয়ারে চারটি ভিন্ন দেশের বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে মোট ১১টি লিগ শিরোপা জিতেছেন ইব্রাহিমোভিচ। মোট ১২ বার হয়েছেন সুইডেনের বর্ষসেরা ফুটবলার। ব্যালন ডি’অরের লড়াইয়ে ২০১৩ সালে হয়েছিলেন চতুর্থ। এবার সেই ঝুলিতে আরেকটি অর্জন যোগ হলো।
বান্ধবীর সাথে বাগদানের পর পর তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তার প্রেয়সীকে তিনি কী উপহার দিয়েছেন? ইব্রা জবাব দেন, কী? উপহার? সে ইব্রাকে পেয়েছে, এর চেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে?
এবার কেউ যদি এসি মিলানকে প্রশ্ন করে এই বয়সে ইব্রা ক্লাবকে কি দিয়েছেন? ক্লাবের পক্ষে উত্তরটা, 'শিরোপা' নয় বরং ইব্রা নিজেকে দিয়েছেন এটাই হওয়া উচিত।