বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হয়েছে ১৯৩০ সাল থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪২ এবং ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপের পর্দা না ওঠায় এখন পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতার ২১টি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এতগুলো আসরের মধ্যে শিরোপা জিততে পেরেছে মাত্র ৮টি দেশ।
ফুটবল খেলুড়ে যেকোনো দেশেরই লক্ষ্য থাকে ফিফা বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা। বিশ্ব ফুটবলের সেই শ্রেষ্ঠত্বের স্বাদ নিতে ফেবারিট এবং শক্তিশালী দলগুলোর চেষ্টার কোনো কমতি থাকে না। কিন্তু সাফল্য ধরা দেয় না সবার কাছে।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের স্বীকৃতি পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে ব্রাজিল (১৯৫৮, ১৯৬২) এবং ইতালি (১৯৩৪, ১৯৩৮) বাদে কোনো দলই বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি। বিশ্বকাপ জেতা কঠিন- এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই শিরোপা ধরে রাখাটা যে নিঃসন্দেহে আরও কঠিন- তা এই ছোট তথ্যেই স্পষ্ট।
আরও পড়ুন- বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া যখন অভিশাপ (পর্ব ১
বিশ্বকাপ শিরোপা না হয় ধরে রাখা কঠিন, তাই বলে শিরোপা ধরে রাখতে এসে গ্রুপপর্বেই বাড়ি ফিরে যাওয়া? এ তো রীতিমতো অঘটন। এমন অঘটনের শিকার পাঁচটি দল। এদের মধ্যে এক দল আবার দ্বিতীয়বারের মতো এমন ভরাডুবির শিকার হয়েছে।
আগের পর্বে আমরা দেখেছিলাম তিন ডিফেন্ডিং বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নদের প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেওয়ার ইতিহাস। আজ দেখব আরও তিন দলের কথা, যারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবজ্বল অভিশাপ নিয়ে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল-
ইতালি (২০১০)
বিশ্বকাপে ইউরোপের সবচেয়ে সফল দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেছিল ইতালি। লক্ষ্য ছিল ব্রাজিলের পাঁচ বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসানোর। কিন্তু নিজেদের একটি লজ্জাজনক কীর্তির পুনরাবৃত্তি করে ইতালিয়ানরা।

টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে যথাক্রমে প্যারাগুয়ে এবং নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে ইতালি। তবে ইতালি ছিল নির্ভার, কারণ শেষ ম্যাচের আগে তাদের সামনে বিদায় নেওয়ার কোনো জটিল সমীকরণ ছিল না।
কিন্তু গ্রুপপর্বে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে নবাগত স্লোভাকিয়ার কাছে অপ্রতাশিতভাবে ২-৩ গোলে হেরে যায় আজ্জুরিরা। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র দল হিসেবে দুবার ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে যায় ইতালি।
স্পেন (২০১৪)
ফিফা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বশেষ এবং ৮ম দল হিসেবে ২০১০ সালে শিরোপা জেতে স্পেন। ২০০৮ এবং ২০১২ সালে প্রথম এবং একমাত্র দল হিসেবে টানা দুবার ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে নেয় স্প্যানিশরা।
টিকিটাকা দিয়ে বিশ্ব ফুটবলে টানা কয়েক বছর ছড়ি ঘোরালেও ২০১৪ বিশ্বকাপে এসে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখে তারা। ২০১০ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্পেন। কিন্তু শিরোপা ধরে রাখার মিশনে নেমে সেই ডাচদের কাছে ১-৫ গোলে শোচনীয় পরাজয় বরণ করে ইকার ক্যাসিয়াস-জাবি আলোন্সোদের দল।

পরের ম্যাচে চিলির কাছে ০-২ গোলের হারে বিশ্বকাপ থেকে লা রোজাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যায়। শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৩-০ গোলে জিতলেও তা স্রেফ স্বান্ত্বনা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
জার্মানি (২০১৮)
২০১০ সালের ইতালির মতো জার্মানিও ব্রাজিলের পাঁচ বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসানোর হাতছানি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ভাবতেও পারেনি তাদের জন্য কী দুঃস্বপ্ন অপেক্ষা করছে।
প্রথম ম্যাচেই মেক্সিকোর কাছে ১-০ গোলের পরাজয় দিয়ে বিশ্বকাপ ধরে রাখার মিশন শুরু হয় জার্মানদের। পরের ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখে জার্মানি।

দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখতে শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ড্র হলেই জার্মানির জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু ইনজুরি সময়ে দুই গোল হজম করে ১৯৩৮ সালের প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায়ঘণ্টা বাজে ইউরোপীয় পরাশক্তিদের।