“দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ”-খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবলে জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছে থাকে প্রতিটি ফুটবলারেরই। ফিফা বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ যে ট্রফিটি দেওয়া হয়, সেটি স্বর্ণমণ্ডিত হলেও সবার কাছে এটি সোনার চেয়েও দামি।
বিশ্বকাপ ফুটবলের পরবর্তী আসরের পর্দা উঠতে আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি। এবারের আসরে অংশগ্রহণকারী ৩২টি দেশ ঘুরে অবশেষে আয়োজক দেশ কাতারে পৌঁছেছে সোনায় মোড়ানো বিশ্বকাপ ট্রফিটি। বিশ্বকাপ ট্রফির নকশার দিকে তাকালে দেখা যায়- বৃত্তাকার পৃথিবী সদৃশ একটি বস্তুকে দুটি মানবমূর্তি তাদের হাত তুলে ধরে রয়েছে।
বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসর বসেছিল ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে। তখন কিন্তু টুর্নামেন্টের নাম ফিফা বিশ্বকাপ ছিল না, তৎকালীন ফিফা সভাপতির নামানুসারে ছিল জুলেরিমে কাপ। বিশ্বকাপজয়ী দলকে বর্তমান সোনালি ট্রফি দেওয়া হতো না, দেওয়া হতো জুলেরিমে ট্রফি। ১৯৭০ সালে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে এই ট্রফি চিরতরে নিজেদের করে নেয় ব্রাজিল।

১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত পরের বিশ্বকাপেই আবির্ভাব ঘটে ফিফা বিশ্বকাপের বর্তমান ট্রফিটির। ১৪ ইঞ্চি উচ্চতা এবং ১৩ পাউন্ড (প্রায় ৬ কেজি) ওজনের এই ট্রফিটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল ১৮ ক্যারেট খাঁটি স্বর্ণ। সত্তরের দশকে এই ট্রফিটি তৈরিতে খরচ হয়েছিল ৫০ হাজার ডলার। তবে বর্তমানে এটির বাজার মূল্য ২০ মিলিয়ন ডলার।
আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে ইতালি জায়গা করে নিতে পারেনি। তবে অংশগ্রহণকারী হিসেবে না হলেও টুর্নামেন্টে থাকবে ইতালির প্রতিনিধিত্ব। টুর্নামেন্ট শেষে যে বিশ্বকাপ ট্রফি জেতার জন্য এত প্রতিযোগিতা, সেটির নির্মাতা যে ছিলেন একজন ইতালিয়ানই। ১৯৭১ সালে সিলভিও গাজ্জানিগা নামে মিলানের এক শিল্পী বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা করেন।

তবে শুধু সিলভিও গাজ্জানিগাই নন, ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা ফিফার কাছে বিশ্বের ৭টি দেশের আরও ৫২ জন ভাস্কর বিশ্বকাপ ট্রফির জন্য নকশা জমা দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ফিফার মনে ধরে গাজ্জানিগার নকশাটিই। এরপর থেকে গত পাঁচ দশক ধরে বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরি করে আসছে এই ইতালিয়ান পরিবার।
ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির নকশার ব্যাখ্যা দিয়ে ২০০২ সালে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিলভিও গাজ্জানিগা বলেছিলেন, বীরত্বের পুরস্কার হিসেবে আমি এই ট্রফির নকশা করেছিলাম। কিন্তু সেটি কোনো অতিমানবের বীরত্ব বিবেচনায় নিয়ে না। এটা প্রচলিত কোনো কাপ না।

সিলভিও গাজ্জানিগা ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর ৯৫ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে চলে যান। তার ছেলে জর্জিও গাজ্জানিগা জানিয়েছিলেন, বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা করার সময়ই তার বাবা বুঝেছিলেন যে তার আঁকা নকশাটি চোখে দেখে অনেকে নাও বুঝতে পারেন। তাই তিনি একটি প্লাস্টার মডেল সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ট্রফির নকশাটি দেখার পরপরই আয়োজকরা বুঝেছিলেন যে নকশাটি খুবই ফটোজেনিক হবে। ট্রফিটি হাতে উঁচিয়ে ধরা সহজ এবং তুলে ধরার পর দেখতেও অসাধারণ লাগে। তিনি একটি সর্বজনীন ট্রফি তৈরি করেছেন।
শুনতে অবাক লাগতে পারে, তবে সত্যি এটিই যে বিশ্বকাপ ট্রফিটির এমন মনোমুগ্ধকর নকশার পরেও সিলভিও গাজ্জানিগা সরাসরি কোনো মুনাফা পাননি। কারণ বিশ্বকাপ ট্রফির নকশা বাছাইয়ের জন্য যে প্রতিযোগিতা হয়েছিল, তাতে বিজয়ীর কাজের স্বত্ত্বাধিকার রাখার সুযোগ দেয়নি ফিফা।