২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বেই বিদায় নিয়েছিল তৎকালীন ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। চার বছর আগের সেই দুঃস্বপ্ন আবারও উঁকি দিচ্ছে জার্মান শিবিরে। জাপানের কাছে ১-২ গোলে হেরে যে কাতার বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হয়েছে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের।
বুধবার (২৩ নভেম্বর) কাতারের রাজধানী দোহার খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ই গ্রুপের ম্যাচে জার্মানির বিপক্ষে শুরুতে অবশ্য এগিয়ে যেতে পারতো জাপানই। ম্যাচের ৮ মিনিটে জাপানি মিডফিল্ডার জুনিয়া ইতোর ক্রস থেকে পা ছুঁইয়ে ফরোয়ার্ড ডেদাইজেন মায়েদা বল জালে পাঠালেও অফসাইডের কারণে সেই গোল বাতিল হয়।
তবে প্রথমার্ধের বাকি সময়টা একচেটিয়াভাবে জার্মানির দখলে ছিল। ১৬ মিনিটের সময়ে কর্নার থেকে আন্টোনিও রুডিগারের নেওয়া হেড পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। চার মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে জসুয়া কিমিচের শট ঠেকান জাপান গোলরক্ষক শুইচি গোন্ডা। ফিরতি বল ইলকাই উড়িয়ে মারলেও অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান।
ম্যাচের ৩৩ মিনিটে অবশ্য সেই গুন্ডোগানের নেওয়া পেনাল্টি থেকেই এগিয়ে যায় জার্মানি। জাপান গোলরক্ষক শুইচি গোন্ডা ডি-বক্সে ডেভিড রাউমকে ফাউল করলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। স্পটকিক থেকে বল জালে জড়াতে ভুল হয়নি জার্মান মিডফিল্ডারের। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে কাই হাভার্টজ গোল করে জার্মানির লিড দ্বিগুণ করলেও ভিএআরে তা নাকচ হয়ে যায়।
প্রথমার্ধে ৮১% বল পজেশন রাখা জার্মানি দ্বিতীয়ার্ধেও জাপানের ওপর দাপট চালাবে বলেই মনে হচ্ছিলো। বিরতির পর মাঠের নামার মিনিট চারেকের মধ্যেই দারুণ আরেকটা গোলের সুযোগ পায় জার্মানরা। তবে জাপানের পাঁচজন খেলোয়াড়কে পেরোতে পারলেও বল জালে জড়াতে পারেননি জামাল মুসিয়ালা।
ম্যাচের ৬০ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল পেতে পারতেন গুন্ডোগান। তবে তার নেওয়া শট পোস্টের বাইরের অংশে লেগে চলে যায়। ৬৬ থেকে ৭০ মিনিটের মধ্যে বেশ কয়েকবার জার্মানি লিড বাড়ানোর সুযোগ পেলেও শুইচি গোন্ডার দৃঢ়তায় ম্যাচে টিকে থাকে জাপান। ম্যাচে এশিয়ান দলটির ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শুরু এরপর থেকেই। মূলত বদলি খেলোয়াড়দের ওপর ভর করেই দুর্দান্তভাবে ফিরে আসে জাপান।
৭৩ মিনিটে ইতোর নেওয়া শট জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়াল নয়্যার দারুণভাবে ফিরিয়ে না দিলে তখনই ম্যাচে ফিরতো জাপান। তবে মিনিট তিনেক পরে জার্মান অধিনায়ক আর বাঁচাতে পারেননি জার্মানিকে। কারোকু মিতোমার পাস থেকে বল পেয়ে শট নেন বদলি হিসেবে মাঠে নামা তাকুমি মিনামিনো। নয়্যার সেই শট আটকে দিলেও ফিরতি বলে গোল করে জাপানকে সমতায় ফেরান চার মিনিট আগে বদলি হিসেবে মাঠে নামা রিতসু দোয়ান।
সমতা ফেরানোর পর মিইয়ে যাওয়া জার্মানির বিপক্ষে জেগে ওঠে জাপান। ৮৩ মিনিটে ইতাকুরার লম্বা ফ্রি-কিক থেকে বল পেয়ে জার্মানির ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ৬৭ মিনিটে বদলি হিসেবে মাঠে নামা তাকুমা আসানো। জার্মান ডিফেন্ডার তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও নয়্যারের মাথার ওপর দিয়ে ঠিকই বল জালে জড়িয়ে দেন আসানো।
৮ মিনিটের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড জার্মানি আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। শেষদিকে সমতাসূচক গোলের জন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করলেও জাপানিজ রক্ষণ আর ভেদ করতে পারেনি চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ফলে টানা বিশ্বকাপের টানা দ্বিতীয় আসরে প্রথম ম্যাচে পরাজয়ের স্বাদ পায় জার্মানি। আর জার্মানির বিপক্ষে তিনবারের দেখায় প্রথম জয় তুলে নেয় ব্লু সামুরাইরা।