ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেড় মাস ক্লাবহীন থাকার পর সৌদি ক্লাব আল নাসরে যোগ দিয়েছেন পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। সৌদি ক্লাবটির হয়ে অভিষেকের জন্য ইতোমধ্যে মরুর দেশেও পা রেখেছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার রোনালদো।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) সিআর সেভেনকে সৌদি ক্লাবের খেলোয়াড় হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়েও দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আল তায়ের ক্লাবের বিপক্ষেই অভিষেকের কথা ছিল পর্তুগিজ তারকার। তবে, গত এপ্রিলে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে হারের পর সেলফি তুলতে আসা এক ভক্তের মোবাইল ফোন আছড়ে ভেঙে ফেলার ঘটনায় দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা থাকায় এখনই মাঠে নাম হচ্ছে না সিআরসেভেনের।
তবে, দর্শকের মোবাইল ভেঙে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া রোনালদো সৌদি আরবে পা রেখেই ভেঙেছেন দেশটির স্পর্শকাতর একটি আইন।
সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, বিয়ে না করে একজন পুরুষ এবং নারী একসঙ্গে বাস করতে পরেন না। কিন্তু রোনালদো এবং তার সঙ্গিনী জর্জিনা এখনো বিয়ে করেননি। আর জর্জিনাকে নিয়ে তিনি সৌদি আরবে একইসঙ্গে থাকছেন। যদিও, এরকম একটি স্পর্শকাতর আইন ভাঙার পরও শাস্তির মুখে নাও পড়তে হতে পারে রোনালদোকে।
কারণ, আল নাসরের সঙ্গে চুক্তির সময় নিশ্চয়ই রোনালদো এই ব্যাপার নিয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে নিয়েছেন।
আর বিষয়টি নিয়ে স্প্যানিশ ক্রীড়া বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ফুটবল এসপানা কথা বলেছে সৌদি আরবের দুই আইনবিশেষজ্ঞের সঙ্গে। তারা বলেছেন, সৌদি আইনে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হলেও অন্য পশ্চিমা নাগরিকের বেলায় যেমনটি হয়, সৌদি কর্তৃপক্ষও রোনালদোর ব্যাপারটি একই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবে। সৌদি কর্তৃপক্ষ সাধারণত পশ্চিমা নাগরিকদের এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায় না বলেও জানান ওই দুই আইনবিশেষজ্ঞ
তাই, রোনালদো-ভক্তদের আপাতত এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
উল্লেখ্য, আড়াই বছরের চুক্তিতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে যোগ দিয়েছেন সিআর সেভেন।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দলে টানার বিষয়টিতে ফুটবলীয় দিক যতটা না, তার চেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে ব্যবসায়িক কারণ। আর হবে নাই বা কেন? ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নামটা নিজেই একটা ব্র্যান্ড। ৩৯ বছর বয়সের দোরগোড়ায় দাঁড়ানো রোনালদোর জন্যও তাই টাকা ঢালতে কার্পণ্য করেনি সৌদি ক্লাবটি।
তবে কী পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে এই দলবদল হয়েছে, সেটি আল নাসর বা রোনালদোর পক্ষ থেকে এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। তবে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টিভি চ্যানেল আল এখবারিয়া নিউজের তথ্যমতে, আল নাসরে খেলার মাধ্যমে রোনালদোর বার্ষিক আয় দাঁড়াবে ১৭২ মিলিয়ন ব্রিটিশ পাউন্ড (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২,১৫৯ কোটি টাকা)।
তবে এই টাকা শুধুমাত্র মাঠে খেলার জন্য পাবেন না রোনালদো। সিবিএস স্পোর্টসের তথ্যমতে, আল-নাসের তাকে বছরে বেতন দিবে ৬২ মিলিয়ন পাউন্ড, বাকি টাকা রোনালদো পাবেন তার ইমেজ স্বত্ব, বিজ্ঞাপনে অংশগ্রহণসহ আরও আনুষাঙ্গিক কাজকর্ম থেকে।
এদিকে, পর্তুগিজ তারকা আল নাসরে যোগদানের পর ক্লাবটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্টগুলোতে ভক্তদের সংখ্যা অগণিত হারে বাড়ছে। ইন্সটাগ্রামে ৪গুণের বেশি ফলোয়ার বেড়েছে সৌদির ক্লাবটির। ইউরোপীয় গণমাধ্যমসহ পুরো বিশ্ব মিডিয়ার নজরে এসেছে আল নাসের। ক্লাবটি এখন এখন ফুটবল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
আল নাসরেও ৭ নম্বর জার্সি পরে খেলবেন রোনালদো। গত দুই দশক ধরে ইউরোপের ক্লাব ফুটবলের সেরা তারকাদের একজন ছিলেন রোনালদো। সব মিলিয়ে ইউরোপের ৪টি ক্লাবে খেলেছেন তিনি। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে তিনি পাঁচটি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, তিনটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ এবং দুটি করে স্প্যানিশ লা লিগা ও ইতালিয়ান সিরি আ জিতেছেন। ব্যালন ডি অর পুরস্কার জিতেছেন ৫ বার।