তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই রানের রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম ম্যাচটিতে টাইগাররা জয়লাভ করলেও দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। বৃষ্টির চোখরাঙানি ছিল সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচের আগেও। তবে বৃষ্টির আশঙ্কা উপেক্ষা করে ঠিকই সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে মাঠে গড়ায়। তাতে আইরিশদের ১০ উইকেটে হারিয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে স্বাগতিকরা।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) সিলেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আয়ারল্যান্ড। আগের ম্যাচ থেকে একটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। ইয়াসির আলী রাব্বি বাদ পড়ায় দলে ফিরেছেন চোখের চোটের কারণে দুই ম্যাচে মাঠের বাইরে থাকা অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ।
বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে শুরু থেকেই নাকাল হয় আয়ারল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম চার ওভারে মাত্র রান তুলতে পারে সফরকারীরা। দলীয় ১২ রানে আইরিশদের প্রথম উইকেটের পতন হয়। ইনিংসের পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে হাসান মাহমুদের বলে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দেন ৮ রান করা ওপেনার স্টিফেন ডোহানি।
পরের ওভারেই আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় উইকেট ফেলে দিতে পারত বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের বলে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন পল স্টার্লিং। তবে সেই ক্যাচ তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন মিরাজ। যদিও স্টার্লিংকে ফেরাতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। অষ্টম ওভারের প্রথম বলেই ৭ রান করা আইরিশ ওপেনারকে এলবডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন হাসান।
তিন বল একইভাবে হ্যারি টেক্টরকেও সাজঘরে ফেরান হাসান। তবে ডানহাতি পেসারের বলে আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নিয়ে সফল হয় বাংলাদেশ। দলীয় ২২ রানেই ৩ উইকেট হারায় সফরকারীরা। পরের বলেই লিটন দাস যদি লোরকান টাকারের ক্যাচ না ফেলতেন, তাহলে বাংলাদেশের সঙ্গে হাসানও চতুর্থ উইকেট পেতেন।
পরের ওভারেই স্লিপে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচ বানিয়ে তাসকিন আহমেদ ফেরান অ্যান্ডি বালবির্নিকে। আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে এক চারে ৬ রান করেন আইরিশ অধিনায়ক। প্রথম ১০ ওভারে মাত্র ২৭ রানের খরচায় আয়ারল্যান্ডের ৪ উইকেট তুলে নিয়ে পাওয়ার প্লেতে দুর্দান্ত ছিল স্বাগতিকরা।
২৬ রানে চতুর্থ উইকেট হারানোর পর টাকার এবং কুর্টিস ক্যাম্ফার মিলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। পঞ্চম উইকেটে দুজন মিলে ৪২ রান তুলেছিলেন। তবে ইনিংসের ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৬৮ রানে টাকারকে এল্বিডব্লিউ করে জুটি ভাঙেন এবাদত হোসেন। পরের বলেই তিনি জর্জ ডকরেলকে বোল্ড করলে ৬৮ রানে ৬ উইকেট হারায় আয়ারল্যান্ড।
দ্বিতীয় স্পেলে এসে জোড়া আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। ২২তম ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম বলে অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনকে মিডউইকেটে নাসুম আহমেদের সহজ ক্যাচ বানান তাসকিন। এক বল পরেই ডানহাতি পেসার মার্ক অ্যাডায়ারকে বোল্ড করলে ৭৯ রানে ৮ উইকেট হারায় আইরিশরা।
আয়ারল্যান্ড নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালেও এক প্রান্ত আগলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন কুর্টিস ক্যাম্ফার। তবে হাসানের চতুর্থ শিকার হয়ে তাকেও ফিরতে হয়। পুল করতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে তাসকিন আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন এ আইরিশ ব্যাটার। আউট হওয়ার আগে ৪৮ বলে চারটি বাউন্ডারিতে ৩৬ রান করেন ক্যাম্ফার।
নিজের পরের ওভারে গ্রাহাম হিউমকে এলপব্লিউর ফাঁদে ফেলেন হাসান। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউতে সফল হয় বাংলাদেশ। ফলে ২৮.১ ওভারে ১০১ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট শিকার করে বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন হাসান মাহমুদ। এছাড়া, তাসকিন আহমেদ তিনটি এবং এবাদন হোসেন দুটি করে উইকেট নেন।
১০২ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ঝড়োগতিতে ইনিংস শুরু করেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। প্রথমে অধিনায়ক তামিম ছিলেন তুলনামূলক বেশি আগ্রাসী থেকেও পরে লিটনও হাত খোলেন। শেষ পর্যন্ত দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১০২ রানের জুটিতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় টাইগাররা। পাঁচ চার এবং দুই ছয়ে ৪ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। অন্যদিকে, ১০টি চারে অর্ধশতক তুলে ৩৮ বলে ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন লিটন।