২০২২-২৩ মৌসুমের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে যেতে হলে চেলসিকে ইতিহাসই গড়তে হতো। কিন্তু ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় অজস্র ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্ম দেওয়া রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে পেরে ওঠেনি ব্লুজরা। উল্টো ইংলিশ ক্লাবটিকে তাদের মাঠে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ চারে পা রেখেছে লস ব্লাঙ্কোসরা।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) স্টামফোর্ড ব্রিজে শুরু থেকেই রিয়ালের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিল চেলসি। ১১ মিনিটে গোলের প্রথম সুযোগও পায় স্বাগতিকরাই। কিন্তু প্রতিপক্ষ ডি-বক্সে অরক্ষিত অবস্থায় বল পেলেও এনগোলো কান্তের শট লক্ষ্যে থাকেনি।
২০ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদও। দানি কার্ভাহালের কাছ থেকে চেলসির ডি-বক্সে বল পেয়ে যান রদ্রিগো গোয়েস। ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারের নেওয়া জোরাল শট চেলসি গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগাকে ফাঁকি দিতে পারলেও পোস্টের বাইরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায়।
প্রথমার্ধের শেষদিকে চেলসির রক্ষণভাগে ত্রাস সৃষ্টি করেন লুকা মডরিচ। ৩২ মিনিটে দানি কার্ভাহাহালের বাড়ানো বলে ক্রোট মিডফিল্ডারের শট ঠেকিয়ে দেন কেপা। মিনিট দশেক পর মডেরিচের ক্রসে শট নিলেও বলে-পায়ে ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে পারেননি ভিনিসিয়াস জুনিয়র।
পরের মিনিটে দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে রিয়াল মাদ্রিদ প্রায় গোল বের করেই ফেলেছিল। গোলরক্ষক থিবো কর্তোয়ার কাছ থেকে বল পেয়ে একাই চেলসির রক্ষণভাগে পৌঁছে যান ফেদে ভালভার্দে। উরুগুইয়ান মিডফিল্ডারের বাড়ানো ক্রসে করিম বেনজেমা শট নিলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
প্রথমার্ধে রিয়াল বেশি সুযোগ পেলেও গোলের সবচেয়ে সহজ সম্ভাবনা ছিল চেলসির সামনেই। যোগ করা সময়ে রিচি জেমসের বাড়ানো নিচু ক্রসে বল পেয়ে গেছিলেন ফাঁকায় দাঁড়ানো মার্ক কুকুরেল্লা। কিন্তু স্প্যানিশ ফুলব্যাকের নেওয়া বুলেট গতির শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন কর্তোয়া। ফলে গোলশূন্যভাবেই দুই দল মধ্যবিরতিতে যায়।
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দ্বিতীয়ার্ধেও চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি চেলসি। কিন্তু চাপ সামলে রাখা রিয়ালের সামনে পরিষ্কার সুযোগ পাচ্ছিল না লন্ডনের ক্লাবটি। উল্টো ৫৮ মিনিটে দারুণ এক প্রতি আক্রমণে স্প্যানিশ পরাশক্তিরাই এগিয়ে যায়।
হলুদ কার্ডের খড়্গে কাটা পড়ে সেমিফাইনালের প্রথম লেগে নিষিদ্ধ হওয়া এডের মিলিতাওর পাস চেলসির চালোবাহ ঠেকাতে ব্যর্থ হলে ডান প্রান্ত দিয়ে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে পার্শ্বরেখা থেকে কাটব্যাক করেন রদ্রিগো। তার বাড়ানো ক্রসে বেনজেমা পা চালাতে ব্যর্থ হলে বল পেয়ে যান ভিনিসিয়াস। তিনি নিজে শট না নিয়ে বল বাড়িয়ে দেন রদ্রিগোর দিকে। ভিনিসিয়াসের স্বদেশি উইঙ্গারও লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি।
পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণে গতি বাড়াতে জোয়াও ফেলিক্স, রাহিম স্টার্লিং, ম্যাসন মাউন্টদের মাঠে নামান চেলসি কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড। তবে তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। উল্টো ৮০ মিনিটে আরেক পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ করে রিয়াল মাদ্রিদ।
ভিনিসিয়াসের কাছ থেকে বল পেয়ে সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যান ভালভার্দে। চেলসা গোলরক্ষক কেপাকে এগিয়ে আসতে দেখে উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার নিজে শট না নিয়ে বাইলাইনের কাছ থেকে কাটব্যাকে রদ্রিগোর দিকে বল বাড়ান। অনায়াসেই চেলসির জালে বল পাঠানোর বাকি কাজটা সারেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
চেলসির মাঠে ব্লুজদের বিপক্ষে জোড়া গোলের মাধ্যমে নতুন একটি রেকর্ডেও নাম লেখালেন রদ্রিগো। এ তরুণ ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গারই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে স্টামফোর্ড ব্রিজে চেলসির বিপক্ষে জোড়া গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় (২২ বছর ৯৯ দিন)।
শেষ পর্যন্ত চেলসিকে ২-০ গোলে হারিয়ে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-০ গোলের অগ্রগামিতায় শেষ চারের টিকিট পেল রিয়াল মাদ্রিদ। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে প্রথম সফরকারী দল হিসেবে চেলসির মাঠ স্টামফোর্ড ব্রিজে দুবার জয়ের স্বাদ পেল স্প্যানিশ ক্লাবটি। এ নিয়ে সর্বশেষ ১৩ মৌসুমের ১১ বারেই সেমিফাইনালে উঠল লস ব্লাঙ্কোসরা। সেমিফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটি কিংবা বায়ার্ন মিউনিখের মু্খোমুখি হবে কার্লো অ্যানচেলত্তির শিষ্যরা।