৯ দিনের বিশ্বকাপ অনুশীলন শেষে, এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বাসে রওনা হচ্ছিলেন আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা। তখন এক ভক্ত চিৎকার করে বলেন, “লিও, কাপ ফিরিয়ে নিয়ে এসো।”
প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে বুধবার, নিজনি নভোগোরদে-ও। সেখানে আর্জেন্টিনা টিমের বাস হোটেলের সামনে আসা মাত্র সমর্থকরা গান শুরু করেন মেসি-কে নিয়ে। সমর্থকদের ওই গানের কথা ছিল – “মেসির হাতেই ফিরবে বিশ্বকাপ, আমরা উদযাপন করব বিজয়”।
এ থেকেই বুঝা যায়, নিজেদের বিশ্বকাপ ভাগ্যের জন্য শুধু মেসির উপর নির্ভর করছেন একটি দেশের সমর্থকরা। কিন্তু, বিষয়টি যে একজন খেলোয়াড়ের মানসিকতায় কতোটা চাপ ফেলতে পারে, তা হয়তো স্বয়ং মেসি ছাড়া অন্য কেউ ভালোভাবে বুঝাতে পারবেন না।
আর্জেন্টিনার সমর্থকরা, ঠিক এভাবেই ভালোবেসেছিলেন আরেক আর্জেন্টাইন কিংবদন্তী ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপও এনে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, সে সময়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। ম্যারাডোনাকে মাঠে সাহায্য করার জন্য দলে ছিলেন, হোর্হে ভ্যালদানো, অস্কার রুয়েররি’র মতো খেলোয়াড়রা।
কিন্তু, বর্তমানের আর্জেন্টিনা দলের চিত্র ভিন্ন। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষ এখন ঘরে বসেই দেখতে পান মেসির খেলা, দেখতে পান সতীর্থদের পর্যাপ্ত সাহায্যের অভাবে মাঠে তাকে বারবার ব্যর্থ হতে। তবুও, চেষ্টা থামান না মেসি। আবার এই মেসিকেই বার্সার ম্যাচগুলোতে দেখা যায় ভিন্ন রূপে। তাকে মাঠে সফল হওয়ার সুযোগ করে দেন তার বার্সা সতীর্থরা।
এবারের বিশ্বকাপে, নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে পেনাল্টি মিস করায় সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় মেসি। সে সময় তার পাশে এসে দাঁড়ান আর্জেন্টাইন কিংবন্দন্তী ম্যারাডোনা।
সমালোচকদের উদ্দেশ্যে ম্যারাডোনা বলেন, “একটানা ৫টি পেনাল্টি মিস করেছিলাম, তবুও আমি ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা। দলের কারণেই ম্যাচ ও দুই পয়েন্ট হারিয়েছে আর্জেন্টিনা, পেনাল্টির কারণে নয়। দায়িত্ব পালনে কোনো কার্পণ্য করেনি মেসি। ও ওর দায়িত্ব ঠিকভাবেই পালন করেছে।”
অন্যদিকে, সমালোচনার তোপের মুখে পড়া মেসির পাশে এসে দাঁড়াতে দ্বিধাবোধ করেননি, সাবেক আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার হার্নান ক্রেসপো। ক্রেসপো মেসি প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, “পারফরম্যান্সের জন্য দশের মধ্যে পাঁচ দেয়া উচিত মেসিকে। অবশ্যই,আমরা ওর কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করি। তবে, ভুলে গেলে চলবে না মেসি, ম্যারাডোনা নন। আর মেসির পক্ষে একা বিশ্বকাপ জেতাও সম্ভব না।”
হার্নান্দো ক্রেসপো আরও বলেন, “এ বিষয়টি প্রথমে আর্জেন্টাইনদের এবং পরে তার সতীর্থদের বুঝতে হবে। বার্সেলোনার মতো সঠিক পরিস্থিতি তৈরি করে দিলে, মেসি জাদু দেখাতে পারবে। কিন্তু, এটি না হলে ওকে মাঠে ভুগতেই দেখা যাবে।”