দলবদলের মৌসুমের শুরুতেই পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। অর্থাৎ, ২০২৩-২৪ মৌসুমের পরই এ ফরাসি উইঙ্গার পিএসজি ছাড়বেন। ফরাসি ক্লাবটির সাবেক ক্রীড়া পরিচালক লিওনার্দোরও ধারণা, এমবাপ্পের পিএসজি ছাড়ার সময়টা ঘনিয়ে এসেছে।
২০২১-২২ মৌসুমের শেষে এই ফরাসি ফরোয়ার্ডকে দলে ভেড়াতে রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। যদিও শেষ পর্যন্ত স্প্যানিশ পরাশক্তিদের প্রস্তাব পায়ে ঠেলে পিএসজির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেন এমবাপ্পে। তবে বছর না ঘুরতেই ফের তার দলবদল নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের দলবদলের বাজারে শুরু হতে না হতেই যেন ফের সংবাদের শিরোনামে চলে এসেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। পিএসজির সঙ্গে নতুন চুক্তি সইয়ের বছর না পেরোতেই ফরাসি ফরোয়ার্ডের ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জনে সরগরম দলবদলের বাজার।
পিএসজির সঙ্গে কিলিয়ান এমবাপ্পের চুক্তির মেয়াদ মূলত ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। অবশ্য ফরাসি উইঙ্গারের সামনে ২০২৫ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তবে সেটি করতে হবে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে।
এদিকে, এমাবাপ্পে গত ১২ জুন চিঠি দিয়ে পিএসজিকে চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর ইচ্ছার কথা জানিয়ে দেন। ফরাসি উইঙ্গারের দাবি, ক্লাব কর্তৃপক্ষ তার এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আরও ১২ মাস আগেই জানত। এমনকি চুক্তি নবায়ন নিয়েও কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আগামী মৌসুম শেষেই তরুণ উইঙ্গার এমবাপ্পের সামনে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ক্লাব ছাড়ার সুযোগ থাকবে। কিন্তু পিএসজি তাকে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ছাড়তে রাজি নয়। তারা এমবাপ্পেকে অন্তত ২০০ মিলিয়ন ইউরোতে বিক্রি করতে চাইছে।
২০১৯ থেকে ক্রীড়া পরিচালকের দায়িত্বে থাকা লিওনাদোর্কে গত বছর চাকরিচ্যুত করে ফরাসি ক্লাবটি। খেলোয়াড়ি জীবনেও লিওনার্দো দুই বছর পিএসজিতে খেলেছেন। তাই এ ব্রাজিলিয়ান দূর থেকে এখনও পিএসজির একজন শুভাকাঙ্ক্ষী।
পিএসজির মঙ্গলজনক ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় রেখেই লিওনার্দোর ধারণা, এমবাপ্পের ক্লাব ছাড়ার এটাই সঠিক সময়। ফরাসি গণমাধ্যম লেকিপকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লিওনার্দো বলেন, “পিএসজির ভালোর জন্যই আমি মনে করি, এমবাপ্পের চলে যাওয়ার সময় এসেছে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন।”
এমবাপ্পে ক্লাব ছাড়লেও পিএসজির কেন দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই, লিওনার্দো সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ফরাসি ক্লাবটির সাবেক এ ক্রীড়া পরিচালক বলেন, “কিলিয়ান এমবাপ্পের আগেও পিএসজি ছিল, তার চলে যাওয়ার পরও পিএসজি থাকবে।”
লিওনার্দো বলেন, “সে (এমবাপ্পে) ছয় বছর ধরে পিএসজিতে আছে। এই ছয় বছরে পাঁচটি ভিন্ন ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। (২০১৮ ও ২০২২ সালে রিয়াল মাদ্রিদ, ২০১৯ সালে লিভারপুল, ২০২০ সালে বায়ার্ন মিউনিখ, ২০২১ সালে চেলসি ও ২০২৩ সালে ম্যানচেস্টার সিটি)। সেই সব দলে তো এমবাপ্পে ছিলেন না। কাজেই এমবাপ্পেকে ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা সম্ভব।”
লিওনার্দো মুখ খুলেছেন এমবাপ্পের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ নিয়েও। গত ১২ জুন ফ্রান্স ফুটবলকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন এমবাপ্প। সেখানে পিএসজি আর নিজের সম্পর্কে অনেক কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে এমবাপ্পে জানান, পিএসজিতে খেলে আর কোনো লাভ হবে না। পাশাপাশি দলে ঐক্যের অভাব এবং বিভক্তি নিয়েও কড়া মন্তব্য করেন।
স্বাভাবিকভাবেই এমবাপ্পের এমন বক্তব্য পিএসজির খেলোয়াড়রা ভালোভাবে নেননি। দলে নতুন আসা দুজনসহ পিএসজির ছয়জন খেলোয়াড় পিএসজির চেয়ারম্যান নাসের আল খেলাইফির সঙ্গে দেখা করেছেন। এমবাপ্পের মন্তব্যে যে তারা অখুশি, সেটাই জানিয়েছেন খেলাইফিকে।
এমবাপ্পের এই মন্তব্যকে পিএসজির এক খেলোয়াড় ক্লাবের প্রতি অপমান হিসেবে উল্লেখ করেন। ক্লাবের চেয়ারম্যান খেলাইফিও এ মন্তব্যকে পিএসজি স্কোয়াডের সব সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব হিসেবে দেখছেন। সব মিলিয়ে পিএসজির সবার কাছেই বিরাগভাজন হয়ে উঠেছেন এমবাপ্পে।
এমবাপ্পের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ পিএসজির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে লিওনার্দো বলেন, “গত দুই বছরে এমবাপ্পের আচরণে স্পষ্ট যে তিনি এখনও সত্যিই একটি দলকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম না। সে একজন দুর্দান্ত খেলোয়াড় কিন্তু একজন নেতা নন। তিনি একজন দুর্দান্ত গোলদাতা কিন্তু সৃজনশীল না। তার ঘিরে একটি দল তৈরি করা কঠিন।”
২০১৭ সালে আরেক ফরাসি ক্লাব মোনাকো থেকে ১৮০ মিলিয়ন ইউরোতে পিএসজিতে যোগ দেন। এরপর থেকে দলটির হয়ে ২৬০ ম্যাচে মাঠে নেমে ২১২ গোল করে ক্লাবের ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে বসেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ না জিততে পারলেও ফরাসি ক্লাবটির হয়ে পাঁচটি লিগ ওয়ানসহ ১২টি শিরোপা জিতেছেন এমবাপ্পে। সেই সঙ্গে তিনি টানা চারবার লিগ ওয়ানের বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন।