মুখে যতই সৌহার্দ্যের বুলি আওড়ানো হোক, ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলোয়াড়রা শতভাগ পেশাদারিত্ব বজায় রাখেন। সম্প্রীতির বাণী আউড়ে মাঠে নেমে তারা প্রতিপক্ষকে চুল পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ। কিন্তু কখনো কখনো চোটের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা জল এনে দেয় প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের চোখেও।
"ল্যাটিন আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ" কোপা লিবার্তাদোরেস টুর্নামেন্টে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে। প্রতিযোগিতার শেষ ষোলোর প্রথম লেগে মঙ্গলবার (১ আগস্ট) ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিলের ফ্লুমিনেন্স ও আর্জেন্টিনার আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে ফ্লুমিনেন্সের তারকা ফুলব্যাক মার্সেলো ভিয়েরার এক ট্যাকেলে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের ডিফেন্ডার লুসিয়ানো সানচেজ মারাত্মক পায়ের চোটে পড়েন। প্রতিপক্ষ হলেও ভয়ঙ্করভাবে চোটে পড়া লুসিয়ানোকে দেখে ৩৫ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান লেফটব্যাকের চোখের জল বাঁধ মানেনি। পুরো মাঠেই তখন যেন এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
ম্যাচের ৫৫ মিনিট। বুয়েন্স এইরেসে প্রথমার্ধে গ্যাব্রিয়েল আভালোসের গোলে ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স তখন ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে। পিছিয়ে থাকা দলকে ম্যাচে ফেরানোর লক্ষ্যে মাঝমাঠ থেকে আক্রমণে উঠতে চেয়েছিলেন মার্সেলো। সেজন্য ট্রেডমার্ক ড্রিবলিং আর পায়ের কাজ দিয়ে তিনি প্রতিপক্ষকে ফাঁকি দিতে ব্যস্ত।
তখনই আচমক ঘটে বিপত্তি। সামনে এগিয়ে আসা লুসিয়ানোকে কাটানোর সময়ে মার্সেলোর পা আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডারের পায়ের ওপর পুরো ভর নিয়ে পড়ে। পুরো ব্যাপারটি এতই দ্রুত ঘটে যায় যে মার্সেলো কিংবা লুসিয়ানো কেউই ভিন্ন কিছু করার সুযোগ পাননি। ফলে মারাত্মকভাবে পা ভেঙে যায় লুসিয়ানোর। তীব্র ব্যথায় মাঠেই কাতরাতে থাকেন লুসিয়ানো।
পা ভেঙে লুসিয়ানো যখন লুটিয়ে পড়েন, তখন মার্সেলোর চোখের কোণে একরাশ অশ্রু। এ তীব্র বেদনার, সহমর্মিতার, অনুশোচনার। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় থাকা এ ডিফেন্ডারের চোখেমুখের অভিব্যক্তি স্পষ্ট বলে দিচ্ছিল, অনিচ্ছাকৃত ট্যাকলটি নিয়ে বড় অপরাধবোধে ভুগছেন তিনি। মুষড়ে পড়া মার্সেলোকে দেখে সতীর্থ এবং প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রাও তাকে স্বান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসেন।
মারাত্মক চোটগ্রস্ত লুসিয়ানোকে তৎক্ষণাৎ স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। রেফারিও ভিডিও অ্যাসিস্টেন্ট রেফারির (ভিএআর) সঙ্গে পরামর্শ শেষে মার্সেলোকে দেখানো হয় লাল কার্ড। সতীর্থরা খানিকটা মতবিরোধ করলেও মার্সেলো বিমর্ষচিত্তে মাঠ থেকে উঠে যান। তবে মাঠ ছাড়ার চেয়ে যে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের চোটের ঘটনাই যে মার্সেলোকে বেশি পোড়াচ্ছিল, সেটা দিবালোকের মতোই স্পষ্ট ছিল।
ম্যাচের শেষদিকে অবশ্য ঠিকই সমতায় ফিরে আসে ফ্লুমিনেন্স। ফলে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের ক্লাবের মধ্যকার কোপা লিবার্তাদোরেসের শেষ ষোলোর প্রথম লেগটি ১-১ গোলে ড্র হয়। কিন্তু ম্যাচের ফলাফল ছাপিয়ে পরে বড় হয়ে ওঠে লুসিয়ানোর প্রতি মার্সেলোর জানানো শুভকামনার বার্তাটি। পাশপাশি মার্সেলোর দল ফ্লুমিনেন্সও তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে।
ম্যাচ শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্সেলো পুরো ব্যাপারটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি ২৯ বছর বয়সী ডিফেন্ডারের দ্রুত আরোগ্যলাভেরও কামনা করেন সাবেক এ রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। ইনস্টাগ্রামে মার্সেলো বলেন, “এক খেলোয়াড়কে চোটে ফেলার আজ মাঠের ভেতর আমাকে খুব কঠিন একটা মুহূর্তের মধ্যে যেতে হয়েছে। আমি তোমার সম্ভাব্য দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। পৃথিবীর সব শক্তি তোমার সহায় হোক।”