বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার নাম বললে সবাই একবাক্যে ক্রিকেটের কথাই আগে বলবেন। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করাও সুযোগ পেলেই এদেশের রাস্তায় ব্যাট-বল হাতে নেমে পড়েন। ক্রিকেট বিশ্বেও বাংলাদেশ দল এখন সমীহ জাগানিয়া এক নাম। এছাড়া, বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে সাঁতার ও অ্যাথলেটিক্সের মতো ইভেন্টেও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।
পৃথিবীর অনেক দেশেই বিভিন্ন খেলার ওপর স্নাতক পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে বাংলাদশে এতদিন সেই সুযোগ ছিল না। এ নিয়ে বাংলাদেশের খেলাপ্রেমী কিশোর-তরুণদেরও হা-হুতাশ দেখা যেতো। তবে এখন থেকে হয়তো সেটি আর থাকবে না। প্রথমবারের মতো ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকস ও সাঁতারের ওপর স্নাতক করার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি), যার পোশাকি নাম “ব্যাচেলর অব স্পোর্টস স্টাডিজ”।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে “ফিজিক্যাল স্পোর্টস অ্যান্ড এডুকেশন”-এ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চালু হলেও নির্দিষ্টভাবে কোনো খেলার ওপর চার বছর মেয়াদি পড়াশোনার সুযোগ এই প্রথম। সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু স্নাতকই নয়, ২০২০ সালে সংশোধিত বিকেএসপি আইন অনুযায়ী স্নাতকোত্তর পর্যন্ত চালু করতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি।
বিকেএসপির মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড় তৈরি করা। একই সঙ্গে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানের আগ্রহে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রীড়াশিক্ষার ওপরও জোর দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নিজেদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বিকেএসপির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এটি একটি ভালো সুযোগই বলতে হবে।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত চার বছর মেয়াদী এ কার্যক্রমে প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে অ্যাথলেটিক্স, ক্রিকেট ও সাঁতার বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিকেএসপি। ভর্তিচ্ছুকদের আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আগামী ২০ আগস্ট সকাল ৯টায় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। অনলাইনে ভর্তি ফর্ম পূরণ করে সেটির প্রিন্টেড কপি পরীক্ষার দিন সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে।
বিকেএসপিসহ বাংলাদেশের যেকোনো স্বীকৃত শিক্ষা বোর্ড বা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শাখা থেকে ২০২১ ও ২০২২ সালের এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) এবং ২০১৯ ও ২০২০ সালের এসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় (৪র্থ বিষয়সহ) পৃথকভাবে ন্যূনতম জিপিএ ৩.০০-সহ উভয় পরীক্ষায় সম্মিলিতভাবে কমপক্ষে জিপিএ ৬.৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনকারী শিক্ষার্থীকে যেকোনো খেলায় জাতীয়, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। পাশপাশি আবেদনকারীরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় আবেদন করতে পারবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, ভালো মানের খেলোয়াড় ও একাডেমিক পর্যায়ে সাফল্য পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরাই ভর্তি হতে পারবেন।
সিলেবাসের বিষয়বস্তু
বিকেএসপি কলেজ কর্তৃক প্রণীত সিলেবাসের মধ্যে নিজ নিজ খেলার ব্যবহারিক অনুশীলনের পাশাপাশি জোর দেওয়া হচ্ছে ক্রীড়াবিজ্ঞানের ওপর। সেই সঙ্গে ক্রীড়া ব্যবস্থাপনা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নির্ধারিত সর্বজনীন স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসও থাকবে। চার বছর মেয়াদী স্নাতকের শেষ বর্ষে গিয়ে ক্রীড়া সাংবাদিকতার ওপর নির্দিষ্ট কোর্সও পড়তে হবে।
বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে কীভাবে অনুশীলন পরিচালনা করাতে হয়, সে বিষয়গুলো ছাড়াও ক্রীড়াবিজ্ঞানের অন্যান্য বিষয়বস্তু হলো ক্রীড়া ও ক্রীড়াবিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব, শরীরতত্ত্ব বিদ্যা, এক্সারসাইজ ফিজিওলজি, স্পোর্টস বায়োমেকানিকস, ক্রীড়া মনোবিজ্ঞান ও ক্রীড়া পুষ্টিতত্ত্ব।