অর্জনের ডালা আর রেকর্ডের পাতা মিলিয়ে লিওনেল মেসির ফুটবল ক্যারিয়ার যেন সোনায় সোহাগা। পেশাদার ক্যারিয়ারে দলগত আর ব্যক্তিগত পর্যায়েও ৩৬ বছর বয়সী এ ফুটবলারের আর কিছুই জেতার বাকি নেই। ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় তাই চাপ ছাড়া খেলাটিকে নিজের মতো করে উপভোগ করছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা।
তবে এখনো যেহেতু অবসর নেননি, মেসির সামনে তাই এখনো প্রাপ্তির পাল্লা ভারী করার সুযোগ রয়েছে। শনিবার (১৯ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় লিগস কাপের ফাইনালে ন্যাশভিলে আরেক মার্কিন ক্লাব ন্যাশভিল এসসির মু্খোমুখি হবে মেসির দল ইন্টার মিয়ামি। টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে এটি হবে ফ্লোরিডাভিত্তিক ক্লাবটির প্রথম শিরোপা।
লিগস কাপের ফাইনালে এক অর্থে মেসির সামনেও রেকর্ডের হাতছানি রয়েছে। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৪৩টি শিরোপা জিতেছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। ফলে ফুটবলার হিসেবে সর্বোচ্চ দলীয় শিরোপা জয়ের রেকর্ডটা দানি আলভেসের সঙ্গে ভাগাভাগি করছেন মেসি। শনিবারের ফাইনালটি জিতলেও ৪৪তম শিরোপা জিতে রেকর্ডটি এককভাবে নিজের করে নেবেন মেসি।
শনিবারের লিগস কাপ ফাইনালকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমের মু্খোমুখি হয়েছিলেন মেসি। যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে পা রাখার পর এটিই ছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের প্রথম সংবাদ সম্মেলন। পৌনে এক ঘণ্টার সেই সংবাদ সম্মেলনে ব্যালন ডি অর, ইন্টার মিয়ামি, যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলসহ অনেক বিষয়েই কথা বলেছেন মেসি।
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কার এক সাংবাদিক মেসিকে ব্যালন ডি অর নিয়ে প্রশ্ন করেন। আগামী ৩০ অক্টোবর ২০২২-২৩ মৌসুমের ব্যালন ডি অর জয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে। এখন পর্যন্ত সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে মেসির নামই। তবে ব্যালন ডি অর প্রসঙ্গে মেসি এমনই নির্বিকার ছিলেন, যেন এই পুরস্কারটি তার কাছে আর কোনো অর্থই রাখে না।
মেসি বলেন, “আমি আমার ক্যারিয়ারে অনেকবার বলেছি যে ব্যালন ডি অর গুরুত্বপূর্ণ একটি পুরস্কার। ব্যক্তিগত পর্যায়ের স্বীকৃতি হিসেবে এটা সবচেয়ে সুন্দর পুরস্কার। কিন্তু আমি কখনোই এটাকে অতো গুরুত্ব দিইনি। আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দলীয় শিরোপা।”
এখন পর্যন্ত রেকর্ড সর্বোচ্চ সাতবার ব্যালন ডি অর জিতেছেন মেসি। ক্যারিয়ারে যেখানে অনেক ফুটবলার একবার ব্যালন ডি অর জেতার জন্য চাতক পাখির মতো তৃষ্ণার্ত থাকে, সেখানে আর্জেন্টাইন এই তারকা যেন ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিনের দেওয়া পুরস্কারটিতে বগলদাবা করাকে ডালভাত বানিয়ে ফেলেছেন। ব্যালন ডি অর নিয়ে তাই মেসির অত ভাবনা না থাকাটাই স্বাভাবিক।
তবে ব্যালন ডি অর মেসি নির্ভাবনায় আছেন কাতার বিশ্বকাপ জয়ের পর। আলোকজ্জ্বল ক্যারিয়ারে মেসির একমাত্র অপ্রাপ্তি বলতে ছিল বিশ্বকাপ না জেতাটাই। গোটা টুর্নামেন্টে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর মরুর বুকে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে সোনালি ট্রফি উঁচিয়ে ধরে সেই অতৃপ্তি ঘোচান মেসি।
ব্যালন ডি অর নিয়ে তাই বাড়তি চিন্তা না থাকার কথা উল্লেখ করে মেসি বলেন, “আমি ভাগ্যবান যে ক্যারিয়ারে সবকিছু জিতেছি। আমার ক্যারিয়ারে যে অপূর্ণতা ছিল, সেই বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর আমি ব্যালন ডি’অর পুরস্কার নিয়ে কমই ভাবছি। আমার সেরা পুরস্কার ছিল বিশ্বকাপ জয়।
তিনি আরো বলেন, এখন আমি মুহূর্তগুলো উপভোগ করছি। ব্যালন ডি অর নিয়ে আমি অতটা ভাবছি না। যদি পুরস্কারটা পাই, ভালো। আর যদি নাও পাই, আমি নিজের অর্জন নিয়ে সন্তুষ্ট।”
গত জুনে সাইত্রিশে পা দিলেও মেসির এখন যে ফর্ম, তাতে তিনি অনায়াসেই ইউরোপে খেলা চালিয়ে যেতে পারতেন। পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষের পর বার্সেলোনায় প্রত্যাবর্তনের গুঞ্জনও জোরেশোর শোনা গিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ফুটবলের পাট চুকিয়ে মেসি যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামিতে।
গন্তব্য হিসেবে ইন্টার মিয়ামিকে বেছে নেওয়ার প্রসঙ্গে মেসি বলেন, “আমরা এমন এক জায়গায় আছি, যেখানে আমরা থাকতে চেয়েছিলাম। আমি বার্সেলোনা ছাড়তে চাইনি। ক্লাব (বার্সা) ছাড়া এবং পরবর্তীতে পিএসজিতে যোগদানের সিদ্ধান্তের ভারটা পুরোপুরি আমার ওপর ছিল না। পরিবর্তনের সেই সময়টা বেশ কঠিন ছিল। তবে মিয়ামিতে আসার পরিস্থিতিটা সম্পূর্ণ উল্টো।”
জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পা দিয়ে ইন্টার মিয়ামিতে যোগদানের পরই ক্লাবের জার্সিতে দারুণ ছন্দে আছেন মেসি। এখন পর্যন্ত দলের পক্ষে খেলা প্রতিটি ম্যাচেই গোল পেয়েছেন তিনি, যার সবগুলোই লিগস কাপে। যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকার ও মেক্সিকোর লিগা-এমএক্সের ক্লাবগুলো নিয়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতার ফাইনালে ওঠার মাধ্যমে ২০২৪ সালের কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপেও ইন্টার মিয়ামির অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে।
ইন্টার মিয়ামিতে নিজের দারুণ শুরুর প্রসঙ্গে মেসি বলেন, “ক্যারিয়ারে আরো অনেক কিছু যোগ করার তাড়না নিয়ে আমি এখানে এসেছিলাম। টাটার (কোচ জেরার্ডো মার্টিনো) আগমনের পর আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। কনকা চ্যাম্পিয়নসে নাম লিখিয়ে আমরা দারুণ খুশি।”
তিনি আরো বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে সকারের প্রসার নিয়ে আমার ভাবনা নেই। আমি এখানে খেলাটিকে উপভোগ করতে চাই এবং এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নিয়েছি। আমার পরিবারের কথা ভেবে আমি খুবই আনন্দিত। যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখার পর থেকে প্রতিটি দিন আমাদের যেভাবে কাটছে, সেটি আমি বেশ উপভোগ করছি।”
সময়টা উপভোগ করলেও যুক্তরাষ্ট্রে শুরুর দিনগুলো ফ্লোরিডার দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া মেসির জন্য অনুকূল ছিল না। তবে দ্রুতই সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন জানিয়ে মেসি বলেন, “শুরুর দিনগুলো কঠিন ছিল। এখানে গরম বেশ তীব্র, আর্দ্রতাও অনেক বেশি। কখনও কখনও তা আপনি অনুভবও করবেন। তবে আমি দ্রুতই মানিয়ে নিয়েছি। আমি ঠিকঠাক আছি সিনথেটিক মাঠ নিয়েও আমার কোনো সমস্যা নেই।”