ফিফা নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়নের স্বীকৃতি পেয়েছে স্পেন। এর মাধ্যমে জার্মানির পর দ্বিতীয় দল হিসেবে নারী ও পুরুষ উভয় বিভাগে বিশ্বকাপ জেতার কীর্তি গড়েছে স্পেন। কিন্তু স্পেনের এই অসামান্য অর্জনের পর নারী ফুটবলারদের চেয়ে বেশি কথা হচ্ছে দেশটির ফুটবল প্রধানকে নিয়ে।
প্রথমবারের মতো স্পেনের নারী বিশ্বকাপ জয় উপলক্ষে ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইএফ) প্রেসিডেন্ট লুইস রুবিয়ালেস স্বাভাবিকভাবেই ছিলেন উচ্ছ্বসিত। কিন্তু আনন্দের আতিশয্যে রবিবার (২০ আগস্ট) অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে নারী বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড জেনিফার হারমোসোকে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসেন।
শুধু তাই না, রুবিয়ালসকে স্পেনের অন্য খেলোয়াড়দের গালে চুমু খেতে এবং আলিঙ্গন করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই চুমুকাণ্ডের দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে তিনি বেশ তোপের মুখে পড়েন। এমনকি স্পেনের সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীও রুবিয়ালেসের সমালোচনা করেন। শুরুতে গায়ে না মাখলেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য নিজের বিতর্কিত কাজের জন্য ক্ষমা চান তিনি।
কিন্তু রুবিয়ালেসের ক্ষমা চাওয়ার পরও বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা শেষ হচ্ছে না। ঘটনার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় শিরোপা উদযাপনের সময় চুমুকাণ্ডের জন্য ৪৬ বছর বয়সী রুবিয়ালেসের কড়া ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেনিফার হারমোসো। এমনকি প্রয়োজনে আইনের আশ্রয়ও নিতে প্রস্তুত এই নারী ফুটবলার।
ফাইনালের পর লাইভ স্ট্রিমে জেনিফার হারমোসো জানান, বিষয়টি তার একদমই ভালো লাগেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরক্তি প্রকাশ করলেও গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি। বুধবার পেশাদার নারী ফুটবলারদের সংগঠন ফুটপ্রো ইউনিয়ন ও নিজের এজেন্সির মাধ্যমে যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন হারমোসো।
জেনিফার হারমোসো বলেন, “বিষয়টি আমার এজেন্সি টিএমজের সঙ্গে মিলে আমার ইউনিয়ন ফুটপ্রো দেখাশোনা করছে এবং এই ঘটনায় তারাই আমার মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবে। এ ধরনের আচরণ করে কেউ যেন পার না পেয়ে যায়, সেটা নিশ্চিতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। নারী ফুটবলারদের অগ্রহণযোগ্য আচরণ থেকে বাঁচাতে যেন দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
রুবিয়ালেসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আগামী সোমবার স্পেনের দ্বিতীয় ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ইয়োলান্দা দিয়াজের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে ফুটপ্রোর। বলে রাখা ভালো, চুমুকাণ্ডের পর রুবিয়ালেসকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
রুবিয়ালেসকে পদচ্যুত করার দাবি তোলার পাশাপাশি জাতীয় স্পোর্টস কাউন্সিলের সভাপতির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে স্পেনের নারী ফুটবল লিগ। স্পেনে নারীদের শীর্ষ ফুটবল লিগ লা লিগা এফের পক্ষ থেকে বলা হয়, “স্প্যানিশ ফুটবলের শীর্ষ প্রতিনিধির লজ্জাজনক আচরণে কলঙ্কিত হয়েছে স্পেনের ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা মুহূর্ত, যিনি আরও একবার নিজের আচরণের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন পদটির যোগ্য নন। কোনো সংস্থার প্রধান কোনোভাবেই তার কর্মীকে এভাবে মাথায় আঁকড়ে ধরে মুখে চুমু দিতে পারেন না এবং এটা মেনে নেওয়ার মতো না।”
এদিকে, ফুটপ্রোর বিবৃতিকে সমর্থন জানিয়েছে পেশাদার ফুটবলারদের প্রতিনিধি সংস্থা ফিফপ্রোও। পুরো বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে রুবিয়ালসের আচরণ এবং সম্ভাব্য শাস্তি নিয়ে আলোচনা করার জন্য একটি জরুরি সভা ডেকেছে রয়্যাল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন।